‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’ কবিতার এই লাইনের যেন বাস্তব প্রমাণ দিলেন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার তিনগাঁও এলাকার বাসিন্দা মো. হাসিব। তবে তাকে শতবার চেষ্টা করতে হয়নি। শুধু কয়েকবারের প্রচেষ্টায় তিনি সফল হয়েছেন। কোয়েল পাখি, হাঁস ও কবুতরের খামারে সফলতা না পেয়ে শাকসবজি চাষে মনোযোগ দেন। কিন্তু চাষাবাদে সফলতা না আসায় তিনি বসে থাকেননি। এক বন্ধুর পরামর্শে মো. হাসিব মাশরুম চাষে মনোনিবেশ করেন। এখানেও তিনি প্রথম দিকে সফল হতে পারছিলেন না। পরবর্তীতে কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবার তিনি মাশরুম চাষে গভীর মনোযোগ দেন এবং এবার তিনি সফল হন। বর্তমানে তিনি বছরে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় করেন এই মাশরুম চাষ থেকে।
সরেজমিনে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, হাসিবের নিজস্ব জমি নেই। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে দুই কক্ষের একটি টিনশেড ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন। এক কক্ষে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন, অন্যটিকে বানিয়েছেন মাশরুম চাষের ল্যাবরেটরি কক্ষ। এখানেই তিনি মাশরুমের স্পন (বীজ) উৎপাদন করেন। আর দুটি কক্ষ ব্যবহার করা হয় মাশরুম উৎপাদনের জন্য।
মো. হাসিব বলেন, ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছা ছিল স্বাধীনভাবে কিছু করার। সে লক্ষ্যে তিনি ড্রাইভিং পেশায় যোগ দেন। কিন্তু এই পেশায় স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। বিভিন্ন সময় বাড়ির বাইরে থাকতে হতো। পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে পারতেন না। পরবর্তীতে নিজ এলাকায় ফিরে অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। কিন্তু অটোরিকশা চালকের সন্তান হিসেবে তার ছেলে-মেয়ে বেড়ে উঠবে এটা ভেবে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। পরবর্তীতে কোয়েল পাখি, হাঁস, কবুতরের খামার, শাকসবজি চাষাবাদ এগুলো দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু কোনোটিতেই সফলতা আসেনি। এরপর এক বন্ধুর পরামর্শে ২০২০ সালের দিকে মাশরুম চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, সাভারের মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে মাশরুমের স্পন কিনে আনি। যখন মাশরুম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি, তখন বুঝতে পারলাম আমাদের জন্য মাশরুম খুবই উপকারী। সেই সঙ্গে আমি গভীরভাবে মাশরুম চাবাবাদে মনোযোগ দেই। সেই সঙ্গে আমার সফলতা আসে।
মো. হাসিব বলেন, মাশরুম চাষ করে আমার যে অর্থ খরচ হয় তার চেয়ে দ্বিগুণ উপার্জন করা সম্ভব হয়। আমার ফার্মটিতে প্রতি মাসে ২০০-২৫০ কেজি মাশরুম উৎপাদন হয়। আর এসব মাশরুম পাইকারি ২০০-২৫০ টাকা এবং খুচরা ৩০০-৪০০ টাকায় বিক্রি করে থাকি। তবে মৌসুমভেদে দাম কমবেশি হয়ে থাকে। শীতকালে মাশরুম উৎপাদন বেশি হয়ে থাকায় তখন তুলনামূলক কমে মাশরুম বিক্রি করা হয়। মাশরুম চাষ করে আমার বাৎসরিক আয় ৭-৮ লাখ টাকা। প্রতিনিয়ত মাশরুমের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমার মাশরুম বিক্রি করতেও হিমশিম খেতে হয়। শুরুতে আশপাশের এলাকার বাড়িঘরে মাশরুম বিক্রি করলেও এখন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আমার এখান থেকে মাশরুম কিনে নিয়ে যায়। আগামীতে আরও বড় পরিসরে মাশরুম চাষ করব। বিভিন্ন জাতের মাশরুম নিয়ে কাজ করব। মাশরুমকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অবস্থায় নিয়ে যেতে চাই। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে আসবে- সেই প্রত্যাশাই করি।
হাসিবের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, মাশরুম চাষ আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। আমার স্বামীর কাছ থেকে মাশরুম চাষ করা শিখেছি। আমি তাকে সহযোগিতা করি। সঙ্গে আমার ছেলেমেয়েরাও সহযোগিতা করে থাকে। প্রথমে স্পন কিনে নিয়ে এসে মাশরুম চাষ করি। এখন নিজেরাই স্পন উৎপাদন করে মাশরুম উৎপাদন করছি। এই মাশরুম আমরা নিজেরাও খাবার তালিকায় রেখেছি। অন্যকেও খাবার তালিকায় রাখতে উৎসাহিত করছি। এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, সাভারের মাশরুম উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে প্রকল্পের অধীনে একটি প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। হাসিব সাহেবকে ওইখানে ১৫ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাকে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। মাশরুম উৎপাদনের জন্য আমরা দুটি ঘর তৈরি করে দিয়েছি। একজন মাশরুম উদ্যোক্তার যা যা প্রয়োজন তাকে তা দেওয়া হয়েছে। আরও কেউ মাশরুম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।