বিচারাধীন অতি পুরনো মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এজন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে সাম্প্রতিক সময়ে অবসরে গিয়েছেন প্রতি জেলায় এমন এক বা একাধিক বিচারককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কমিশন। সম্প্রতি দেওয়ানি মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রস্তাবনায় এ ধরনের কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, এ গুলো বাস্তবায়ন হলে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা কমবে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা দেওয়ানি মামলায় সময় ক্ষেপণ, অর্থব্যয়, মানসিক ও শারীরিক হয়রানি কমবে বিচারপ্রার্থীদের। সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে অধস্তন আদালতে ১৬ লাখ ৫ হাজার ৮০২ দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর মধ্যে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার ১১৮টি।
সুপারিশে বলা হয়েছে, দেওয়ানি কার্যবিধি ও তৎসংশ্লিষ্ট আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার মাধ্যমে সমন জারির ব্যবস্থাকে ত্বরান্বিত করতে হবে। জারিকারকদের যথোপযুক্ত ভ্রমণভাতা ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। দেওয়ানি মামলায় জবাব দাখিলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। মামলার সব পর্যায়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে উৎসাহিত করতে হবে। মামলার চূড়ান্ত শুনানি পর্যায় সংক্ষিপ্ত করতে হবে।
সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রচলিত সংক্ষিপ্ত মেমো অব আপিল বা রিভিশনের দরখাস্তের পরিবর্তে বিস্তারিত কারণ উল্লেখপূর্বক মেমো/দরখাস্ত দাখিল এবং এসবের বিপরীতে বিস্তারিত লিখিত উত্তর দাখিল বাধ্যতামূলক করতে হবে। একই সঙ্গে শুনানি পর্যায়ে আইনজীবীর অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে ওই সব মেমো/দরখাস্ত বিশ্লেষণ করে গুণাগুণের ভিত্তিতে রায় দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, জনবল নিয়োগ ও বাজেট বরাদ্দ করতে হবে।
কমিশনের সুপারিশে আরও বলা হয়, বিদ্যমান সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিভাগীয় পর্যায়ে হাই কোর্ট বিভাগের কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং উপজেলা সদর পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাসহ লিগ্যাল এইড কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে হবে। প্রতিটি জেলায় এবং হাই কোর্ট বিভাগে মনিটরিং প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রকাঠামোতে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে গত ৩ অক্টোবর আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে আট সদস্যের বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে। ৯০ দিনের মধ্যে এ কমিশনকে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। গত ২ জানুয়ারি ৯০ দিন শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদনে প্রস্তুত না হওয়ায় আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এই কমিশনের মেয়াদ।