কিছু অভ্যাস এমন আছে, যেগুলো মানুষের ইহাকালীন সুখ যেমন কেড়ে নেয়, পরকালীন সফলতায়ও ব্যাঘাত ঘটায়। কিছু কাজের দরুন সামাজিক অশান্তিও নেমে আসে। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত জীবনে চলার পথে এ ধরনের অভ্যাস ত্যাগ করা। নিম্নে এমন কয়েকটি কাজ হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো, যেগুলো করলে মুমিনের বিপদে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মত যখন ১৫টি বিষয়ে লিপ্ত হয়ে পড়বে, তখন তাদের ওপর বিপদ-মুসিবত এসে পড়বে। প্রশ্ন করা হলো—ইয়া রাসুলুল্লাহ! সেগুলো কী কী? তিনি বলেন, যখন গনিমতের মাল ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হবে, আমানত লুটের মালে পরিণত হবে, জাকাত জরিমানারূপে গণ্য হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মায়ের অবাধ্য হবে, বন্ধুর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে কিন্তু পিতার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে, মসজিদে শোরগোল করা হবে, সবচেয়ে খারাপ চরিত্রের লোক হবে তার সম্প্রদায়ের নেতা, কোনো লোককে তার অনিষ্টতার ভয়ে সম্মান করা হবে, মদ পান করা হবে, রেশমি বস্ত্র পরিধান করা হবে, নর্তকী গায়িকাদের প্রতিষ্ঠিত করা হবে, বাদ্যযন্ত্রের কদর করা হবে এবং এই উম্মতের শেষ যুগের লোকেরা তাদের পূর্ব যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে, তখন তোমরা একটি অগ্নিবায়ু অথবা ভূমিধস অথবা চেহারা বিকৃতির আজাবের অপেক্ষা করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২২১০)
হাদিস গবেষকদের অনেকের এই হাদিসটির সনদগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও হাদিসে বর্ণিত প্রতিটি অভ্যাসই নিন্দনীয় এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা ছিনিয়ে নেওয়ার কারণে। নিম্নে কোরআন-হাদিস থেকে প্রতিটি পয়েন্টের আলাদা রেফারেন্স বের করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
গনিমতের সম্পদ ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করা : ইসলামের নির্ধারিত আইনের বাইরে গিয়ে গনিমতের সম্পদ নিজের হস্তগত করা জঘন্য অপরাধ। হাদিসে আছে, যারা অন্যায়ভাবে গনিমতের সম্পদ নিজের করার চেষ্টা করবে, তা পরকালে আগুন হয়ে তাদের গ্রাস করবে। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৮২৭)
আমানতের খিয়ানত করা : আমানত রক্ষা করা ফরজ। আমানত রক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, যার আমানতদারি নেই, তার ঈমান নেই। আর যে ওয়াদা রক্ষা করে না, তার দ্বিন নেই। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৯০)
জাকাতকে জরিমানা মনে করা : জাকাত ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। একে অস্বীকার করা বা জরিমানা মনে করা ঈমানের পরিপন্থী কাজ।
স্ত্রীর আনুগত্য করা : স্ত্রীর আনুগত্যের মানে হলো, স্ত্রীর অন্যায় আবদার রক্ষা করতে গিয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধাচরণ করা। স্ত্রীর ভালোবাসায় হালাল-হারাম ভুলে যাওয়া।
রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু ঘরোয়া বিষয়ই নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রেও নিজের স্ত্রীদের থেকে মতামত নিতেন। (বুখারি, হাদিস : ২৭৩১)
মায়ের অবাধ্য হওয়া : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া অথবা বলেছেন, মিথ্যা কসম করা।...(বুখারি, হাদিস : ৬৮৭০)
বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা : বর্তমান যুগে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। অনেক ক্ষেত্রে আমরা বাবার যৌক্তিক কথার ওপর বন্ধুর কথাকে গুরুত্ব দিই। বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করি, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। তবে বাবা যদি ঈমানবিধ্বংসী কোনো প্রস্তাব দেয়, তা ভদ্রভাবে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে, যেমন ইবরাহিম (আ.) করেছেন।
মসজিদে শোরগোল করা : মহানবী (সা.) বলেছেন, সাবধান, তোমরা মসজিদে বাজারের ন্যায় শোরগোল করবে না। (আব দাউদ, হাদিস : ৬৭৫)
অসৎ লোকের নেতৃত্ব : হাদিসে সবচেয়ে খারাপ চরিত্রের লোক হবে তার সম্প্রদায়ের নেতা হওয়াকে কিয়ামতের আলামত হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০৩৬)
কোনো লোককে তার অনিষ্টতার ভয়ে সম্মান করা : অত্যাচার-জুলুম করে প্রভাবশালী হওয়া ব্যক্তিদের মহানবী (সা.) নিকৃষ্ট বলে আখ্যা দিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৬০৩২)
মদ পান করা : ইসলামের দৃষ্টিতে মদ হারাম। মদ পান করলে ৪০ দিন ইবাদত কবুল হয় না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৭৭)
রেশমি বস্ত্র পরিধান করা : দুনিয়ায় পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান করা নিষিদ্ধ। (তিরমিজি, হাদিস : ১৭২০)
নাচ-গানের প্রতি ঝুঁকে পড়া : পবিত্র কোরআনে এই কাজকে অবমাননাকর শাস্তির কারণ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)
বাদ্যযন্ত্রের কদর করা : পবিত্র কোরআনে একে শয়তানের কর্ম বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)
পূর্ববর্তী লোকদের গালাগাল করা : শেষ কিছু লোক পূর্ববর্তী লোকদের অহেতুক গালি দেবে। বর্তমান যুগেও দেখা যায়, অনেকে পূর্ববর্তী নবী বা সাহাবিদের ওপরও বিভিন্ন অমূলক অভিযোগ তুলে বসেন, যা নিষেধ। (বুখারি, হাদিস : ১৩৯৩)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন