রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অর্থনৈতিক জীবন নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই এ প্রশ্ন এসে যায় যে তাঁর পারিবারিক মিরাস কী ছিল? প্রাচীন ইতিহাসবিদদের মধ্যে ইবনে সাদ তাঁর শিক্ষক ইমাম ওয়াকিদি (রহ.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব উম্মে আইমান নামে এক দাসী, পাঁচটি উট ও এক পাল বকরি রেখে গেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তরাধিকারসূত্রে এগুলো পেয়েছেন।’ (ইবনে সাদ, আত-তাবকাতুল কুবরা, পৃষ্ঠা-১০০)
এই সম্পত্তি ছাড়া তিনি পৈতৃক ভিটা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। মহানবী (সা.)-এর প্রথম জীবনীকার ইবনে ইসহাক লিখেছেন, ‘জনাব আবদুল্লাহ সাইয়েদা আমিনার জন্য একটি জায়গা ক্রয় করেছেন। সেখানেই তাঁরা দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করেছেন।’
(সিরাতে ইবনে ইসহাক, পৃষ্ঠা-৩৩)
তাই এটা খুব স্বাভাবিকভাবেই বলা যায় যে মহানবী (সা.) তাঁর মাতা-পিতার বিভিন্ন অস্থাবর সম্পত্তিও উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। উসামা বিন জায়েদ বিন হারেসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মক্কায় আপনি কি আপনার ঘরে অবস্থান করবেন?’ এর জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আকিল কি আমাদের জন্য কোনো জায়গা অবশিষ্ট রেখেছে?’
(মুসলিম, হাদিস : ১৩৫১)
এ হাদিস সহিহ বুখারি ও আবু দাউদেও বর্ণিত হয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, ‘আকিল কি আমার জন্য কোনো ঘর অবশিষ্ট রেখেছে?’
এসব বর্ণনা থেকে জানা যায়, আকিল [রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চাচাতো ভাই] নিজের আপন ভাই-বোনের জায়গার পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জায়গাও বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই জায়গায় হিজরতের আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) বসবাস করতেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহর মৃত্যুসংক্রান্ত আলোচনায় সিরাতবেত্তারা এ বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন যে তিনি ব্যবসার উদ্দেশে মদিনায় গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন কোরাইশি ব্যবসায়ী কাফেলার দলভুক্ত। মদিনা থেকে ফেরার পথে মদিনার সন্নিকটে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে তাঁর পরামর্শে তাঁকে মদিনায় তাঁর নানার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কাফেলা যথারীতি চলে যায়। তাঁরা বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিবকে অবহিত করেন। খবর শুনে আবদুল মুত্তালিব তাঁর বড় ছেলেকে মদিনায় পাঠিয়েছেন। ততক্ষণে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহ ওফাত লাভ করেছেন।
এটা কিছুতেই বলা যায় না যে এটাই ছিল মহানবী (সা.)-এর পিতা আবদুল্লাহর একমাত্র ব্যাবসায়িক সফর, বরং এটা খুব সহজেই অনুমিত হয় যে তিনি এর আগেও ব্যাবসায়িক সফরে বের হয়েছেন। আর তাঁর মৃত্যুর পর এসব অর্থবিত্ত যে রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তরাধিকার সম্পত্তি হিসেবে পেয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন