ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযান ইরানের ওপর মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত পারাপারের হামলায় পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র ক্ষেপণাস্ত্র সাইলো কিংবা পারমাণবিক স্থাপনা নয়, এই হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)-এর শীর্ষ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা। নিহতদের মধ্যে আছেন মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, কমান্ডার হোসেন সালামি এবং আইআরজিসি এর স্পেস ফোর্স প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ। ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের পর ইরানের সামরিক নেতৃত্বের ওপর এটাই সবচেয়ে বড় আঘাত।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই হামলা ছিল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ঠেকানোর পূর্ব প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এর গভীর কৌশলগত উদ্দেশ্য ছিল ইরানি শাসনব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল ও ভেঙে ফেলা।
তবে বাস্তবতা উল্টো। ইসরায়েলের হামলা বরং ইরানের জনগণের মধ্যে জাতীয় সংহতি ও আত্মরক্ষার প্রবল মনোভাব সৃষ্টি করেছে। এমনকি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী ও বিরোধী দলগুলোর ভেতরও ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে ঐক্য তৈরি হয়েছে। অনেকেই এটাকে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর বিদেশি হুমকি হিসেবে দেখছেন।
‘উইম্যান, লাইফ, ফ্রিডম’ আন্দোলনের কর্মীরাও ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। ২০২২ সালে মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় যারা বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তারাও বিদেশি হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
ইরানি ফুটবল কিংবদন্তি আলী দায়ি বলেছেন, “আমি মরতে পারি, কিন্তু কখনো বিশ্বাসঘাতক হব না।” সাবেক বিচারক মোহসেন বোরহানি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “মাতৃভূমির সব রক্ষকদের হাতে চুম্বন দিই।”
এমনকি যারা অতীতে ইরান সরকারের বিরুদ্ধে ছিলেন তারাও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। ফলে পশ্চিমা পরিকল্পিত শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানোর প্রচেষ্টা আপাতত ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল যেভাবে ইরানের জাতীয় ঐক্য ও প্রতিরোধ শক্তিকে জাগিয়ে তুলেছে, তাতে তেহরানের ক্ষমতাবানদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হতে পারে।
লেখক: মোহাম্মদ ইসলামি
সূত্র: আল-জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক