রাজশাহী সিটি করপোরেশন রাসিকের আওতায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে নগরীতে আট থেকে ১৬ তলা উচ্চতার চারটি বহুতল ভবন নির্মাণ শুরু হয় ২০০৯ সালে। এর মধ্যে একটি ভবন আছে বাণিজ্যিক কাম আবাসিক।
ভবনে বিনিয়োগ করে ৫ শতাধিক ব্যক্তি বিপাকে পড়েছেন। দীর্ঘদিনে শেষ হচ্ছে না নির্মাণকাজ। এসব ভবনে কেউ দোকান পেতে, আবার কেউ ফ্ল্যাট পেতে অর্থলগ্নি করেছেন। তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে কি না তা নিয়ে আছে সংশয়।
সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সময়কালে এ কাজ শুরু হয়। নির্মাণাধীন ভবনগুলো হলো নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় ‘স্বপ্নচূড়া প্লাজা’, নিউমার্কেট এলাকায় ‘দারুচিনি প্লাজা’, সাহেব বাজার মুড়িপট্টিতে ‘বৈশাখী মার্কেট’ ও সোনাদীঘির মোড়ে ‘সিটি সেন্টার’। দারুচিনি প্লাজা নির্মাণ করছেন জহির এন্টারপ্রাইজের জহিরুল ইসলাম, স্বপ্নচূড়া প্লাজা নির্মাণ করছেন ফরিদ প্রোপার্টিজের ফরিদ উদ্দিন, বৈশাখী প্লাজা নির্মাণ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা শামসুজ্জামান আওয়াল ও সিটি সেন্টার নির্মাণ করছেন রাজশাহী বাগমারা আসনের সাবেক এমপি এনামুল হক। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তিন বছরে ভবনগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা এখন কত বছরে গড়াবে, বলতে পারছেন না কেউই। যারা এসব ভবনে বাণিজ্যিক ও আবাসিক জায়গা বরাদ্দের জন্য বিনিয়োগ করেছেন, তারা এখন আছেন বেকায়দায়।
দারুচিনি প্লাজায় বিনিয়োগকারী পলান সাহা বলেন, ‘দোকান বরাদ্দের জন্য ২০১১ সালে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখনো দোকান বুঝে পাইনি। কবে পাব তাও জানি না। ব্যবসার টাকা আটকে পড়ায় এখন অনেক কষ্ট করছি।’ স্বাগতম নামের ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুটি দোকান বরাদ্দের জন্য টাকা দিয়ে ঘুরছি। ডেভেলপার বা সিটি করপোরেশন কেউ কিছু বলতে পারছে না। টাকা জমা দিয়েই যেন বিপদে পড়েছি।’ এনা প্রোপার্টিজের নির্মাণাধীন ১৬ তলা ভবনটি ১৬ বছরেও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে তিন তলা পর্যন্ত কিছু ব্যবসায়ী উঠে পড়েছেন। বাকি অংশের কাজ ঝুলে আছে। কারাগারে যাওয়ার আগে এনামুল হক জানিয়েছিলেন, সিটি করপোরেশন জায়গা বুঝিয়ে দিতে দেরি করায় তিনি ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি। জহির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। কাজ শেষ হলেই বিনিয়োগকারীদের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
নগরীর মুড়িপট্টিতে বৈশাখী মার্কেটের নির্মাণকাজ করছেন আওয়ামী লীগ নেতা শামসুজ্জামান আওয়াল। এখন পর্যন্ত তিনি ব্যবসায়ীদের দোকান বুঝিয়ে দেননি। এরই মধ্যে নির্মাণকাজও বন্ধ। তিনি আছেন আত্মগোপনে। নিউমার্কেট এলাকার ইলিশের আড়তের পাশের ভবনটির দোতলা পর্যন্ত উঠেই থমকে আছে ১৫ বছর ধরে। কবে শেষ হবে জানেন না ঠিকাদাররা ও সিটি করপোরেশন।
রাসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আহমদ আল মঈন বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ভবন নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরই দুই পক্ষের মধ্যে (রাসিক ও ঠিকাদার) অংশ বণ্টন হবে। কিন্তু ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আগেভাগেই জায়গা বরাদ্দ দিয়েছে। কাজ শেষ করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার চিঠিও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা কাজ শেষ করতে পারছে না।’