তেলআবিবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া নতুন যুদ্ধ এক মহাবিপর্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এতে কারও লাভ হবে না, বরং বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে— এমনটাই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
দুঃখজনক হলেও সত্য, মধ্যপ্রাচ্যের অতীত ব্যর্থ সামরিক অভিযানের কোনো শিক্ষাই ইসরায়েল নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধটিকে ‘প্রি-এম্পটিভ’ (আগাম প্রতিরোধমূলক) বলে দাবি করলেও বিশ্লেষকদের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ বুশ ও যুক্তরাজ্যের টনি ব্লেয়ারের ইরাক আগ্রাসনের মতোই বড় ভুল।
ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে তাণ্ডব চালিয়ে ইরানি সামরিক ঘাঁটি ও কমান্ডারদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। এতে গোটা অঞ্চল আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। যেমন হয়েছিল ২০০৩ সালের ইরাক অভিযানের সময়।
নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, হামলার লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করা। এ পর্যন্ত নাতানজ, ইসফাহান ও ফোরদোর তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে। তবে এতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ হবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। নাতানজের মতো ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ধ্বংসের ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ বা ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট’ বোমা তাদের কাছে নেই।
ওয়াশিংটনের প্রতিক্রিয়া এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর হামলাটিকে ‘একক ইসরায়েলি অভিযান’ বলে মন্তব্য করলেও পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি হামলার বিষয়ে জানতেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন ছিল কি না, তা পরিষ্কার নয়।
এই হামলা ও যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ইরানকে সম্পূর্ণ দমন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে টানার চেষ্টা ইসরায়েলের ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক উপদেষ্টা মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরোধী।
এই যুদ্ধ ইতোমধ্যেই বৈশ্বিক তেলমূল্য বৃদ্ধি ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করছে। হরমুজ প্রণালী দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটার ঝুঁকিও বেড়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর দ্বিতীয় লক্ষ্য ইরানি শাসনব্যবস্থা পতন ঘটানোও সম্ভব হবে না। ইরানি জনগণের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি ক্ষোভ বাড়বে, যার ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলন দুর্বল হতে পারে। বরং ইরানি পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির যৌক্তিকতা ঘরোয়া সমর্থন পেতে পারে।
এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা ও নতুন উগ্রবাদী সংগঠনের উত্থান ঘটাতে পারে। ইরাকের সাদ্দাম হোসেন পতনের পর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, এই আগ্রাসনও তেমন কিছু ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সর্বোপরি, ইসরায়েল হয়তো স্বল্পমেয়াদি কৌশলগত সুবিধা পেতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয়ের দ্বারও খুলে দিচ্ছে এই অভিযান।
লেখক: ম্যাক্সিমিলিয়ান হেস
উৎস: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক