যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি কোনো পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের জন্য প্রথম এমন সম্মান, যিনি রাষ্ট্রপ্রধান নন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্কে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে।
এর আগে গত মার্চে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের ‘অ্যাবে গেট’ বিস্ফোরণের সন্দেহভাজন হামলাকারীকে পাকিস্তানের সহায়তায় গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে কৃতজ্ঞতা জানান।
মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এই হোয়াইট হাউস বৈঠক সেই সম্পর্কের পুনর্গঠনের অংশ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার সময় ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধের সম্ভাবনা এড়ানোয় পাকিস্তান সেনাপ্রধানের ভূমিকাকে কৃতিত্ব দেন তিনি। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আসিম মুনিরকে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম। ভারত ও পাকিস্তান—এই দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ থামাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।’
এদিকে, এই বৈঠককে কেউ দেখছেন ট্রাম্পের ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক কূটনীতির’ অংশ হিসেবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সংঘাত—সব মিলিয়ে অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতার সময় এ বৈঠককে তাৎপর্যময় বলছেন বিশ্লেষকেরা।
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যাকচ্যানেল’ ভূমিকার কথা বললেও ভারত সরকার দাবি করেছে, এটি সম্পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ফল। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই শান্তিচুক্তিতে ওয়াশিংটনের ভূমিকা স্বীকার করেছে।
হোয়াইট হাউসের এই লাঞ্চের মাধ্যমে পাকিস্তান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর সুযোগ পাচ্ছে। খনিজ সম্পদ, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য, এমনকি ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রেও আলোচনা হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
পাকিস্তানের ইতিহাস বলছে, দেশটির প্রকৃত ক্ষমতা বরাবরই সেনাবাহিনীর হাতে। এবারো সেই ধারার বাইরে কিছু হয়নি বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৈঠক পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অস্বস্তির বার্তা দেয়—কারণ বেসামরিক নেতৃত্ব পুরোপুরি অনুপস্থিত ছিল।
তবে সব মিলিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এটি কি কেবল ‘কৌশলগত রোমান্স’, নাকি ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদের মধ্যে নতুন স্থায়ী ‘ইনার সার্কেল’ গঠনের শুরু?
সোর্স: আলজাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক