সম্প্রতি নিউজফিডজুড়ে ভারতের একটি অশোভন পোস্টারের কারণে ৪০টি দুর্ঘটনার খবর ঘুরপাক খাচ্ছে। গণমাধ্যমের তথ্য মতে, পোস্টারটি ছিল একটি ভারতীয় সিনেমার। ঘটনাটি অনেক পুরনো হলেও সম্প্রতি সেই সিনেমার পরিচালক কৃষ এক সাক্ষাৎকারে জানান, ওই পোস্টার ঘিরে এক সপ্তাহে ঘটেছিল ৪০টির বেশি সড়ক দুর্ঘটনা! পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, পুলিশের একাধিক অভিযোগের মুখে সেই বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলতে হয় নির্মাতাদের।
অনেকেই মজার ছলে এই খবর শেয়ার করলেও একটি নিছক মজার বিষয় নয়।
এ ধরনের পোস্টার, বিলবোর্ড সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, বহু রকম অপরাধের জন্ম দিতে পারে এবং মুমিনের ঈমান আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নিম্নে কোরআন হাদিসের আলোকে এর কিছু নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হলো—
অশ্লীলতার প্রচার : পোস্টার বা বিলবোর্ডে আবেদনময়ী ছবি ব্যবহার করলে অশ্লীলতার প্রচার হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে অশ্লীলতার প্রচার খুবই জঘন্য অপরাধ। এসব কাজে মহান আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ অশ্লীলতার প্রসারকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)
সমাজে অশ্লীলতার প্রসার বেড়ে গেলে কখনো কখনো আসমানি আজাব চলে আসে। তার মধ্যে একটি হলো দুরারোগ্য ব্যাধি।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘...যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তা ছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।...’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)
দৃষ্টিবিভ্রান্তি ও সড়ক দুর্ঘটনা : ব্যস্ত সড়কের পাশে নায়িকা কিংবা মডেলদের আবেদনময়ী ছবি প্রচার মূলত দেহ প্রদর্শনের নোংরা প্রতিযোগিতা। সাধারণত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই এটি করা হয়ে থাকে। এই আকর্ষণই কখনো কখনো বিপদের কারণ হতে পারে।
কারণ আবেদনময়ী এই পোস্টার/বিলবোর্ডগুলো তরুণ-যুবকদের দৃষ্টি এবং মনোযোগকে বিপথে ঠেলে দেয়। এতে চালকরা দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার দৃঢ় আশঙ্কা তৈরি হয়। বিজ্ঞাপনের মনোবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণাগুলোতে দেখা যায়, যৌন আবেদনের মাধ্যমে সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। তবে এই মনোযোগ মূলত যৌন উদ্দীপকের দিকেই কেন্দ্রীভূত থাকে, ফলে ব্র্যান্ড বা পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপেক্ষিতই থেকে যায়।
প্রশ্ন ওঠে, রাস্তার পাশে থাকা এসব যৌন উদ্দীপক বিজ্ঞাপন কি চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, যার ফলে অন্য জরুরি সংকেত, এমনকি নিরাপদ চালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোও তার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়? এ থেকে ধারণা করা যায়, যৌন উদ্দীপক চিত্র এতটাই মনোযোগ-আকর্ষণকারী যে তা চালকের দৃষ্টি সড়ক থেকে দীর্ঘসময় অন্যদিকে সরিয়ে রাখে, ফলে সামনে আসা বিপদ সে টের পায় না বা চলমান পরিস্থিতির সঠিক ধারণা হারিয়ে ফেলে। সাধারণভাবে ধরা হয়, কোনো চালক যদি মাত্র ২ সেকেন্ডের জন্যও সড়ক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, তবে তা দুর্ঘটনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। (সূত্র : https://pmc.ncbi.nlm.nih.gov/articles/PMC6521999/)
চোখের জিনায় লিপ্ত করে : মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, চোখের জিনা হলো (আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত কোনো বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে) দেখা। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)
আবেদনময়ী পোস্টার/বিলবোর্ড মানুষকে এই গুনাহেই বেশি লিপ্ত করে। এটি পথচারীদের মনেও যৌন উদ্দীপনা ও গুনাহের বাসনা সৃষ্টি করে। শিশু-কিশোরদের মনে জন্ম দেয় বিকৃত কল্পনার জগৎ, যা তাদের মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে : ইসলাম নারীদের বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তাদের সৌন্দর্য যত্রতত্র প্রকাশের মাধ্যমে ভোগ্যবস্তু বানানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে; আর তারা তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তবে যা সাধারণত প্রকাশ হয়ে থাকে।’ (সুরা নূর, আয়াত : ৩১)
অনেক সময় পোস্টার/বিলবোর্ডে নারীর আবেদনময়ী ছবি ব্যবহারের ফলে পথচারী মেয়ে-নারীদেরও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে, বখাটেদের ইভ টিজিংয়ের শিকার হতে পারে। তাই নারীর সম্মান বিনষ্ট হয়, পরিবারসহ যাতায়াতের পথে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, এমন পোস্টার/বিলবোর্ড থেকে শহরকে মুক্ত রাখা সময়ের দাবি।
মহান আল্লাহ আমাদের দৃষ্টিকে হেফাজত করার তাওফিক দিন এবং অশ্লীলতার এই ছদ্মবেশী আগ্রাসন থেকে সমাজকে রক্ষা করুন। আমিন।