ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জে ইসরায়েলের হামলায় স্থাপনাটির ওপরের অংশ ধ্বংস হয় এবং এর ভূগর্ভস্থ অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, ইরানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ফোর্ডো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট এখনো সচল রয়েছে।
সম্প্রতি জল্পনা শুরু হয়েছে—যুক্তরাষ্ট্র কি ইসরায়েলকে এমন অস্ত্র দেবে, যা দিয়ে গভীর পাহাড়ের নিচে থাকা ফোর্ডো কেন্দ্রকে ধ্বংস করা সম্ভব? কারণ, এটি নাতাঞ্জের চেয়েও বেশি সুরক্ষিত ও গভীরে অবস্থিত।
কী এই ফোর্ডো পারমাণবিক কেন্দ্র?
ফোর্ডো মূলত ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সামরিক স্থাপনা হিসেবে তৈরি হয়েছিল। দেশটির উত্তর-পশ্চিমে কুম শহরের ৩০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে একটি পাহাড়ের ভেতরে এটি নির্মিত হয়েছে। ২০০৯ সালে ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) কে এই কেন্দ্রের অস্তিত্বের কথা জানায়। যদিও ততদিনে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এর খোঁজ পেয়ে গিয়েছিল।
এই স্থাপনায় ২,৯৭৬টি সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন করার পরিকল্পনার কথা ২০০৯ সালেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স প্রকাশ করে। এখানে প্রায় ৩,০০০ সেন্ট্রিফিউজ ঘুরানোর ব্যবস্থা থাকলেও নাতাঞ্জের তুলনায় (৫০,০০০ সেন্ট্রিফিউজ) ক্ষমতা অনেক কম। ২০২৩ সালে এখানে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির প্রমাণ মেলে IAEA'র আকস্মিক পরিদর্শনে।
ইসরায়েলের হামলায় ফোর্ডো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি?
IAEA'র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ফোর্ডো ও খন্দাবের হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টরে কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্থাপনাটি ভূগর্ভে অবস্থিত হওয়ায় বাইরে থেকে আঘাত করাও কঠিন।
ফোর্ডোর পারমাণবিক কার্যক্রম কতদূর?
২০০৯ সালে প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি আলোচনা শুরু হয়। ২০১১ সালে এখানে ২০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের কথা জানায় ইরান। ২০১৫ সালে সই হওয়া পরমাণু চুক্তি (JCPOA)-এর আওতায় ফোর্ডোতে কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। তবে ২০১৮ সালে ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে গেলে ইরান আবার কার্যক্রম চালু করে।
২০২৩ সালে IAEA'র তদন্তে ৮৩.৭% মাত্রার ইউরেনিয়াম পাওয়া যায়—যা অস্ত্রমান ইউরেনিয়ামের কাছাকাছি। ইরান এ দাবি অস্বীকার করেছে।
ফোর্ডো ধ্বংস সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফোর্ডো ধ্বংস করতে হলে ইসরায়েলকে কমান্ডো মিশনে যেতে হবে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ৩০,০০০ পাউন্ডের Massive Ordnance Penetrator (MOP) বোমা দিয়ে এই স্থাপনায় আঘাত করা সম্ভব। তবে ট্রাম্প বলেছেন, “আমি হয়তো করব, হয়তো করব না।”
লেখক: জন টি সারোপলাস
সূত্র: আল জাজিরা
বিডি প্রতিদিন/আশিক