বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কী চায়? হামজাদের মতো প্রবাসী ফুটবলারদের খেলিয়ে গ্যালারি ভরে বাহবা পাওয়া। নাকি সেই সঙ্গে মানেরও উন্নয়ন। হামজাদের পর সামনে কিউবা মিচেল বা আরও প্রবাসী জাতীয় দলে খেলবেন। এতে উন্মাদনা বাড়বে কিন্তু মান কি বাড়বে? বাংলাদেশে প্রবাসী ফুটবলাররা খেলছেন এতে বাফুফে কর্মকর্তারা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। যদিও এ তৎপরতা শুরু হয়েছিল আগে থেকেই। এরা খেলার পরও জয় না পেলে লাভ কি? বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফুটবলের মান বাড়ানো নিয়ে লম্বা বক্তব্য দেন। কিন্তু তার প্রতিফলন যে বাস্তবে রূপ নেবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। কেননা সেই পুরোনো কালচারে বন্দিই রয়েছে। জাতীয় দলের খেলা এলে অল্প সময়ে ক্যাম্প ডেকে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামা। ফলাফলও ছিল তেমন। হতাশা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি।
হামজারা খেলায় অনেকের প্রত্যাশা ৪৫ বছর পর এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। অথচ এ নিয়ে বাফুফের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বাছাই পর্বের ‘সি’ গ্রুপে হংকং ও সিঙ্গাপুর চার পয়েন্ট করে সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের সমান এক পয়েন্ট। এ অবস্থাতেও চূড়ান্ত পর্বের সম্ভাবনা ভালোভাবেই টিকে আছে। কিন্তু বাফুফের গাফলতির কারণে তা হতাশায় পরিণত হতে পারে। অবাক লাগছে জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্ট কমিটির কান্ডজ্ঞান দেখে। বাংলাদেশ গ্রুপে তাদের পরবর্তী ম্যাচ খেলবে ৯ অক্টোবর। ভেন্যু ঢাকা স্টেডিয়াম। ১৪ অক্টোবর আবার অ্যাওয়ে ম্যাচেও হংকংয়ের বিপক্ষে খেলবে। হংকং শক্তিশালী দল তাতে সন্দেহ নেই। ভারতকে তারা পরাজিত করেছে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ড্র করেছে। প্রায় সাড়ে তিন মাস গ্যাপে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
এত লম্বা সময় যখন পাওয়া গেল তা কাজে লাগাতে পারত বাফুফে। কোচিং স্টাফদের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা নেওয়া যেত। দেখা গেল কি সিঙ্গাপুর ম্যাচের পরের দিনই ছুটিতে দেশে ফিরে গেলেন হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। এখানে পরিস্থিতির কোনো গুরুত্ব দিল না। ভেবেছে খেলা যখন অনেক দেরি তখন কাবরেরা থেকেই বা কী করবেন? এ কালচার বাফুফের পুরোনো। কোচ যখন নেই তখন স্বাভাবিকভাবে তপু, রাকিব, জামালরা অলস সময় পার করবেন। বাফুফের কি উচিত ছিল না লোকালদের প্রশিক্ষণে রাখা? এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়রা লম্বা গ্যাপে কী করবে নিজেদের ফিটনেস রাখতে বড়জোর জিমে ব্যস্ত থাকবেন। একে তো আর প্রশিক্ষণ বলা যায় না।
জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন এমন কান্ডজ্ঞান দেখে খুবই বিরক্ত। তিনি বলেন, ‘ফুটবলে কমিটি শুধু পরিবর্তন। রীতি আর পাল্টায় না। পাঁচ দিনের ব্যবধানে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়েতে হংকংয়ের বিপক্ষে খেলবে। অথচ তিন মাসের বেশি সময়ের লম্বা গ্যাপ। এখন কোনো ঘরোয়া আসরও নেই। এর ভিতর খেলোয়াড় সংখ্যা বাড়িয়ে স্থানীয়দের অনুশীলনে রাখা যেত। হামজা বা অন্য প্রবাসীরা তো বিদেশে ঠিকই মাঠে থাকবেন। আর আমাদের স্থানীয়রা অলস সময় পার করবেন। ভালো প্রস্তুতির সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। জানি না এ নিয়ে বাফুফের কোনো ভাবনা আছে কি না।’
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘ফুটবলে এখন যে উন্মাদনা তা হামজাদের ঘিরে। প্রবাসীরা অবশ্যই উঁচু মানের খেলোয়াড়। কিন্তু মানে যদি পরিবর্তন না আসে তাহলে দর্শকরাও মাঠমুখী হবেন না। যত বড় খেলোয়াড় হোক নন কেন পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ লম্বা গ্যাপে খেলবে অথচ এ নিয়ে কোনো ছক থাকবে না তা কি হয়। আমি চাই ম্যাচের দুই মাস আগে ক্যাম্প ডাকা হোক। নতুনদেরও ডাকা হোক। এতে ভালো করার সম্ভাবনা থাকবে। আর ২০ বা ১২ দিন আগে অনুশীলন করে খেলতে নামে তাহলে ভালো কিছু হবে মনে হয় না। এ লম্বা সময়ে হংকং কি বসে থাকবে? নিশ্চয় না। আমি মনেপ্রাণে চাই বাংলাদেশ সুযোগটা কাজে লাগাক।’