ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে প্রথমবার আবেদন করা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে। এদিকে প্রথমবার আশ্রয়ের জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে প্রথমদিকে রয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকরা। তবে পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আবেদনের সংখ্যায় মিশ্র ফল উঠে এসেছে। আর ইউরোপের অন্যতম অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যাও অনেক কমেছে। ইইউর পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মে মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রথমবার আবেদন করা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মে মাসে ইইউর দেশগুলোতে প্রথমবার আবেদনকারী আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ছিল মোট ৫৪ হাজার ৮০০। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ ভাগ কম। তবে ইউনিয়নের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আবেদনকারীর সংখ্যা তার আগের কয়েক মাসের তুলনায় আসলে কিছুটা বেড়েছে। তার আগের তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র উঠে আসে। উদাহরণস্বরূপ, এপ্রিলে মোট আবেদন জমা পড়েছিল ৪৮ হাজার ৯৩৫টি, যা মে মাসের তুলনায় ১২ ভাগ কম।
প্রথমিক আবেদনের তালিকায় তৃতীয় বাংলাদেশ : চলতি বছরের মে মাসে প্রাথমিকভাবে আবেদনকারীদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থীরা। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির মোট ৩ হাজার ৯৫ জন নাগরিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এদিক দিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা। এ দেশটির মোট ৮ হাজার ৮৫ জন আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান, যা ৪ হাজার ৫৭৫ জন এবং চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সিরিয়া, ২ হাজার ৯৩৫ জন। ফলোআপ অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে বিভ্রান্তি : প্রাথমিক আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর আশ্রয়প্রার্থীরা দ্বিতীয় পর্যায়ে যে আবেদনটি করে থাকেন, তাকে বলা হয় ফলোআপ অ্যাপ্লিকেশন। ইইউর তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে জোটের দেশগুলোতে মোট ফলোআপ আবেদনের সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৫৮৫টি।
এ সংখ্যা তার আগের মাসের তুলনায় চার ভাগ বেশি। আর গত বছরের মে মাসের তুলনায় এই সংখ্যা ২০ ভাগ বেশি বলে পরিসংখ্যানে বলা হয়।
২০২৪ সালের অক্টোবরে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের এক রায়ের কারণে এমনটি হতে পারে বলে ধারণা কর হচ্ছে। সে সময় ওই রায়ে আদালত জানায়, বিশেষ ধরনের নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা, যেমন আফগানিস্তানে নারীদের ওপর তালেবানের নির্যাতন, আশ্রয়ের জন্য যোগ্য হবে না।
তার মানে দাঁড়ায়, আফগান ওই নারীরা যারা আগে সাবসিডিয়ারি প্রোটেকশন পেয়েছিলেন তারা আদালতের এমন রায়ের পর শরণার্থীর মর্যাদা পেতে ফলোআপ অ্যাপ্লিকেশন জমা করেছেন।
জার্মানিতে কমেছে আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা : পরিসংখান বলছে, জার্মানিতে প্রথমবার আবেদনের সংখ্যা কমে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে সরকারের শক্তিশালী পদক্ষেপের কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জার্মান সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ৬১ হাজার ৩৩৬ জন প্রথমবারের মতো আশ্রয়ের আবেদন জমা করেছেন। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কম। ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে মোট ১ লাখ ২১ হাজার ৪১৬টি আবেদন জমা পড়েছিল।
শহরগুলোতে স্বস্তি : আবেদনের সংখ্যা কমে আসায় স্বস্তিতে আছে বলে জানিয়েছে জার্মানির শহর কর্তৃপক্ষ।
জার্মানির সংবাদমাধ্যম আউসবুর্গার আলগেমাইনেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অব সিটির প্রধান নির্বাহী ক্রিশ্চিয়ান শাউখারডট বলেন, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আশ্রয় আবেদন কমে আসার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ভালো দিক।’ তবে তিনি জার্মানিতে অবস্থানরত অভিবাসীদের একীভূতকরণের জন্য আরও বেশি অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথা বলেন।
তিনি বলছেন, ‘যারা ইতোমধ্যে এখানে আছেন, শহরগুলোকে তাদের দেখভাল করতে হবে। স্কুলের আয়োজন, ডে কেয়ারের ব্যবস্থা, আবাসনের ব্যবস্থা এখনো অপ্রতুল। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে কাজ করছে।’ যেসব অভিবাসনপ্রত্যাশী দেশ ত্যাগ করার কথা, তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত এবং কার্যকরভাবে করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চাপ কমছে ছোট শহরগুলোতেও : এদিকে নতুন করে আবেদনের সংখ্যা কমে আসার বিষয়টি ছোট শহরগুলোর জন্য স্বস্তির হয়ে উঠছে বলে মনে করছে শহর কর্তৃপক্ষ। জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অব টাউনস অ্যান্ড মিউনিসিপ্যালিটির প্রধান নির্বাহী আন্ড্রে বের্গহেগার বলেন, ‘গত কয়েক মাসে দেখা যাচ্ছে যে আশ্রয় আবেদন কমে আসছে, এটি স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে শ্বাস ফেলার জন্য কিছুটা জায়গা দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আবেদনের সংখ্যা কমে আসার মানে হলো আর চাপ বাড়ছে না। শরণার্থী কেন্দ্রগুলোতে এবং অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলোতে আমরা এক ধরনেন স্বস্তি দেখতে পাচ্ছি।’ তবে গত বছর আসা বিশাল সংখ্যক মানুষকে জায়গা দেওয়া ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে এখনো শহরগুলো হিমশিম খাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। ইনফোমাইগ্রেন্টস