ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে কমপক্ষে আরও ১৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দেড় শতাধিক। এতে করে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গতকাল পৃথকভাবে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ও বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
কাতারভিত্তিক এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৪৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে বেশ কিছু চিকিৎসা সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি মেডিকেল ক্লিনিকে ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই হামলায় আল-তাওবাহ ক্লিনিকের ওপরের তলায় রোগীরা ‘ছিন্নভিন’ হয়ে গেছেন এবং নিহত ১৩ জনের মধ্যে শিশুও রয়েছে। পৃথক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা আনাদোলু বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৫৩ হাজার ১০ জনে পৌঁছেছে বলে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ইসরায়েলি আরও ১৫২ জন আহত হয়েছেন। যার ফলে ইসরায়েলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
উত্তর গাজায় হামলা, ঢুকছে ট্যাংক : বর্বর হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে দখলদার ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে গতকাল সকাল থেকে স্থল ও আকাশ থেকে ব্যাপক হামলা চালানো শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। সেখানকার বেঈত লাহিয়া শহরে দখলদারদের ট্যাংকও প্রবেশ করেছে। বেঈত লাহিয়ার সাধারণ মানুষ জানিয়েছে, গত মার্চের পর উত্তর গাজায় এটি ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা। গতকাল সকাল থেকে ব্যাপক গোলাবর্ষণ ও মিসাইল ছোড়া শুরু করে তারা। এ সময় সেখানে ট্যাংকও প্রবেশ করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী প্রথমে ধোঁয়ার বোমা ছোড়ে। এরপর কাছাকাছি অবস্থান থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এরপর বেঈত লাহিয়ার আল-সালাতিনের দিকে ট্যাংক নিয়ে অগ্রসর হয় তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সাঁজোয়া যান একটি স্কুল ঘিরে ফেলে। যেখানে শত শত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ১২০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যার পর গতকাল নতুন করে আরও ৫০ জনকে হত্যা করেছে দখলদাররা। গাজায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরায়েল। এ সময়ের মধ্যে সেখানে একটি কণাও ঢুকতে দেয়নি তারা। -বিবিসি ও আলজাজিরা
এতে গাজার মানুষ খেয়ে না খেয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গতকাল বলেছেন, গাজার মানুষের অভুক্ত থাকায় বিষয়টিতে তারা উদ্বিগ্ন। তবে দখলদার ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা না করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ সরাসরি স্বীকার করেছেন গাজার মানুষ অভুক্ত থাকছেন। এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে সেটি স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প।