সোমবার হোয়াইট হাউজে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষ করতে একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতেই নেতানিয়াহুর এটি হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে চতুর্থ বৈঠক।
ট্রাম্প এই চুক্তি নিয়ে বেশ আশাবাদী। গত শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমার মনে হয় একটা চুক্তি হতে চলেছে। তবে নেতানিয়াহু রবিবার জানান, এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে যে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব পায়নি।
মার্কিন ও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে ফাঁস হওয়া পরিকল্পনাটির খসড়া অনুযায়ী এর প্রধান কয়েকটি শর্ত হলো, চুক্তি নিশ্চিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার পর ইসরায়েল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শত শত ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেবে। যারা শান্তি প্রক্রিয়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ হবে, সেই সব হামাস সদস্যদের ক্ষমা এবং গাজা থেকে নিরাপদ প্রস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে। গাজায় হামাসের আর কোনো ভবিষ্যৎ ভূমিকা থাকবে না এবং তাদের সব সামরিক কাঠামো ধ্বংস করা হবে। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস পর্যায়ক্রমে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গাজার প্রশাসন চালাবে। এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষাকে স্বীকার করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর গাজায় একটি ভূমিকা নিতে পারবে। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বের অবস্থান থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, যা আগে গাজার সমগ্র জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তরিত করার এবং গাজাকে আমেরিকান মালিকানাধীন রিভেরা হিসেবে গড়ে তোলার পক্ষে ছিল।
এই শান্তি পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র এবং পিএ-এর ভূমিকার কথা উল্লেখ আছে, যা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য পূর্বে রেড লাইন ছিল। গত সপ্তাহে জাতিসংঘে তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ঘোর বিরোধিতা করে পিএ-কে ভেতর থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও, তার জোটের অতি-ডানপন্থী অংশকে রাজি করানো কঠিন হবে। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ আজ সকালেই লিখেছেন, তার দল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বা পিএ-এর ভূমিকার কোনো উল্লেখ আছে এমন কোনো পরিকল্পনায় আপোস করবে না। জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির বলেছেন, হামাসের চূড়ান্ত পরাজয় ছাড়া যুদ্ধ শেষ করার কোনো ম্যান্ডেট নেতানিয়াহুর নেই।
তবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ চুক্তিকে সমর্থন করে বলেছেন, জিম্মি চুক্তি ও যুদ্ধ শেষ করার জন্য নেতানিয়াহুর আমার কাছ থেকে একটি নিরাপত্তা জাল আছে। তিনি লেখেন, নেসেটে এবং দেশে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, বেন-গভির এবং স্মোট্রিচের ফাঁকা হুমকি নিয়ে উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই।
ইসরায়েলি জনগণের পক্ষ থেকেও যুদ্ধ শেষ করার এবং গাজায় অবশিষ্ট ৪৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ বাড়ছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল