যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের অন্য কোনো দেশে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থানকেই সমর্থন জানিয়ে রায় দিয়েছেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার (২৩ জুন) দেওয়া এই রায়ে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো দেশে পাঠানো যাবে।
এই রায়টি এসেছে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যখন বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। সে সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো আদালতের শরণাপন্ন হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে সর্বোচ্চ আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থানকে বৈধ ঘোষণা করে।
এর আগে আরেকটি মামলায় ফেডারেল কোর্ট ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের পরামর্শ ছাড়াই অভিবাসনবিরোধী আন্দোলন দমনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশকেও বৈধতা দিয়েছিল।
এ দুই রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী অভিযান আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের একতরফা অবস্থানের বিপরীতে সোমবার ক্যালিফোর্নিয়ার একটি আদালত ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া’র ফেডারেল তহবিল বন্ধের সিদ্ধান্তকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৩২৪ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল অনুদান পেতে কোনো বাধার সম্মুখীন হবে না।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ক্যাম্পাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন তহবিল বন্ধের উদ্যোগ নেয়।
এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের হার্ভার্ডে ভর্তি নিষিদ্ধের আদেশের বিরুদ্ধেও বস্টনের ফেডারেল কোর্ট রায় দিয়েছে। বিচারক অ্যালিসন ডি বারোগস রায়ে বলেন, “প্রেসিডেন্ট শুধুমাত্র শত্রু রাষ্ট্রগুলোর জন্য এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নয়।”
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইস) এক আগ্রাসী অভিযান চালায়। প্রথম ১০০ দিনে তারা ৬৬,৪৬৩ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার এবং ৬৫,৬৮২ জনকে বহিষ্কার করে। এছাড়া বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমের সময় আরও ৩২ হাজার মানুষকে আটক করা হয়।
আইসের দাবি, গ্রেফতার ও বহিষ্কৃতদের ৮০ শতাংশই গুরুতর অপরাধে জড়িত। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, অনেক নিরপরাধ অভিবাসীকেও নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমনকি যারা শুধু অভিবাসন আইন ভঙ্গ করেছেন বা আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন, তারাও বন্দি হয়েছেন।
আইসের উপপরিচালক ম্যাডিসন ডি শিহান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।”
আইস কর্তৃপক্ষ জনগণের সহায়তা চেয়ে একটি হটলাইন (৮৬৬-৩৪৭-২৪২৩) চালু করেছে, যেখানে অবৈধ অভিবাসীদের সম্পর্কে তথ্য দিলে তা গোপন রাখা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এই সব পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল