কাশ্মীরের পেহেলগামে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন পর্যটকের প্রাণহানির ঘটনার দায় স্বীকার করেছে স্বল্প পরিচিত সশস্ত্র গোষ্ঠী 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)'।
ঘটনার সময় যখন কাশ্মীরের বৈসরণ উপত্যকায় রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, ঠিক তখনই একদল সশস্ত্র ব্যক্তি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে। এতে নিহত হন ২৬ জন পুরুষ পর্যটক। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরও অনেকে।
কারা এই 'টিআরএফ'?
২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর জন্ম নেয়া 'টিআরএফ' প্রথম থেকেই নিজেদের একটি 'নিরপেক্ষ প্রতিরোধ গোষ্ঠী' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। যদিও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, এই গোষ্ঠী আসলে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন 'লস্কর-ই-তৈয়্যেবা' এরই একটি শাখা অথবা তাদেরই তৈরি করা একটি মুখোশ।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বার্তায় টিআরএফ বলেছে, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের 'বহিরাগতদের' আবাসনের অনুমোদনের বিরোধিতা করে। সমালোচকেরা মনে করেন, এই বহিরাগতদের মাধ্যমে ভারত সরকার কাশ্মীরের বিতর্কিত অঞ্চলের জনমিতি পরিবর্তন করতে চায়। বার্তায় টিআরএফ জানিয়েছে, 'যারা এখানে অবৈধভাবে বসতি গড়ার চেষ্টা করবে, তাদের ওপরই সহিংসতা চালানো হবে।'

টিআরএফ'র পূর্ব ইতিহাস ও হামলার ধরন
২০২০ সাল থেকে টিআরএফ ছোটখাটো কিছু হামলার দায় স্বীকার করতে শুরু করে। এর ভেতর নির্দিষ্ট লোকজনকে লক্ষ্য করে হত্যা বা টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ছিল। টিআরএফ বিভিন্ন খুচরা বিদ্রোহী সংগঠন থেকে আসা যোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত। তখন থেকেই ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো টিআরএফের একাধিক সেল বা গ্রুপ ভেঙে দেয়। এরপরও গোষ্ঠীটি টিকে থাকে ও শক্তিশালী হতে থাকে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে কাশ্মীরে যেসব বন্দুকযুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা নিহত হয়েছেন, তাদের বেশির ভাগই টিআরএফের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। টিআরএফ সদস্যরা ক্রমশ ছোট আগ্নেয়াস্ত্র, যেমন পিস্তল ব্যবহার করে টার্গেট কিলিং শুরু করেন অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ থাকা ব্যক্তিদের হত্যা করেন।
২০২০ সালে গোষ্ঠীটি শিরোনামে উঠে আসে। সে সময় কয়েকজন কাশ্মীরি সাংবাদিকের নামে গোষ্ঠীটি তথাকথিত ‘বিশ্বাসঘাতকের হিটলিস্ট’ প্রকাশ করে। তাদের বিরুদ্ধে ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগ তোলা হয়। তালিকার নাম প্রকাশের পরপরই অন্তত পাঁচ সাংবাদিক পদত্যাগ করেন। কেননা, অতীতে এমন হুমকি বাস্তবে রূপ নেওয়ার নজির রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/মুসা