দুই দিনব্যাপী এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ১০০টি কলম বিতরণ করা হয়। আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, চাকসু নির্বাচনে প্রতি প্রার্থী গড়ে ১০ হাজারের বেশি লিফলেট ও পোস্টার ব্যবহার করেন। এসব কাগজের বর্জ্য পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। তাই বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয় এ উদ্যোগ...
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ‘আওয়ার গ্রীন ক্যাম্পাস’। চাকসু নির্বাচনি প্রচারণার পর ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন রাখতে অভিনব উদ্যোগ নেয়। শিক্ষার্থীরা মাত্র ৪০টি পোস্টার বা লিফলেট জমা দিলেই পান একটি পরিবেশবান্ধব কলম। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বুথে চলে এ কার্যক্রম। জিরো পয়েন্ট ও শহীদ মিনারে দুটি বুথে পোস্টার-লিফলেট সংগ্রহ শুরু হয়। দুই দিনব্যাপী এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ হাজার ১০০টি কলম বিতরণ করা হয়। আয়োজকদের তথ্য অনুযায়ী, চাকসু নির্বাচনে প্রতি প্রার্থী গড়ে ১০ হাজারের বেশি লিফলেট ও পোস্টার ব্যবহার করেন। এসব কাগজের বর্জ্য পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। তাই বর্জ্য সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয় এ উদ্যোগ। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আয়েশা সিদ্দিকা কলি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য কলম বিতরণ নয়। বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা তৈরি করা। যারা এ উদ্যোগে অংশ নিচ্ছেন তারা ভবিষ্যতে কাগজের অপচয় থেকে বিরত থাকবেন বলেই আমরা আশাবাদী। শিক্ষার্থীদের এমন অংশগ্রহণে ক্যাম্পাসে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সবুজ দর্শন চর্চায় ‘আওয়ার গ্রীন ক্যাম্পাস’ : সবুজ কেবল একটি রং নয়। এটি সজীবতা, প্রাণোচ্ছলতা ও ভারসাম্যের প্রতীক। এই প্রতীকী ভাব থেকেই গড়ে উঠেছে ‘সবুজ দর্শন’ বা Green
Philosophy যার মূল লক্ষ্য পরিবেশ সংরক্ষণ, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং পরিবেশবান্ধব নেতৃত্ব তৈরি। এই দর্শনের চর্চা ছড়িয়ে দিতে ২০২৫ সালের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মপ্রকাশ করে ‘আওয়ার গ্রীন ক্যাম্পাস’ সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি কাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশ-সচেতনতা ও সবুজ নৈতিকতার প্রসারে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. জানে আলম বলেন, এ উদ্যোগ আমাদের ক্লাবের মূল স্পিরিট থেকে এসেছে। পরিবেশ শিক্ষাকে কেন্দ্র করে বাস্তব উদ্যোগ নেওয়া। নির্বাচনি প্রচারে ব্যবহৃত কেমিক্যালযুক্ত কাগজ প্রকৃতিতে ক্ষতিকরভাবে মিশে যায়; আমরা সেই ক্ষতি রোধের চেষ্টা করেছি। মাত্র দুই দিনেই সব কলম শেষ হয়ে গেছে, এমনকি অনেককে অপেক্ষা তালিকায় রাখতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ব্যক্তির পরিবর্তনেই সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবর্তন সম্ভব। পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণই টেকসই ভবিষ্যতের ভিত্তি। বর্তমানে সংগঠনটির প্রায় ৪০০ সদস্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এটি ছয়টি টিমে বিভক্ত। ইকো কমিউনিটি অ্যান্ড অ্যাডমিন, গ্রীন ক্যাম্পাস ইনিশিয়েটিভ, গ্রীন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, গ্রীন স্টোরি টেলার্স, ইকো ব্র্যান্ডিং এবং ফাইন্যান্স টিম।
যান্ত্রিকতা নয়, সহজাত ও অন্তর্নিহিত মূল্যবোধে পরিবেশের মূল্যায়ন : সবুজ দর্শন অনুযায়ী, পরিবেশের মূল্য কেবল উপযোগিতা নয়- এর রয়েছে সহজাত ও অন্তর্নিহিত মূল্য। অর্থাৎ পরিবেশ নিজেই মূল্যবান, মানুষ তাকে ব্যবহার করুক বা না করুক। যখন মানুষ পরিবেশকে শুধু যন্ত্র বা সম্পদ হিসেবে দেখে, তখন তা ধ্বংসের নৈতিক বৈধতা তৈরি করে। সবুজ দর্শন সেই মানুষকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করে এবং মানুষ-প্রকৃতির সহাবস্থান নিশ্চিত করতে আহ্বান জানায়। এ দর্শনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো এমন এক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করা, যেখানে মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতি সমান মর্যাদায় পাশাপাশি টিকে থাকবে একটি সবুজ সমাজ, সবুজ নাগরিক ও সবুজ রাষ্ট্র।