জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে কক্সবাজারে এসে সারা দেশে আলোচিত এনসিপির পাঁচ শীর্ষনেতা ইনানীর সি পার্ল বিচ রিসোর্ট (রয়েল টিউলিপ) ত্যাগ করে কক্সবাজার সৈকতলাগোয়া প্রাসাদ প্যারাডাইজে উঠেছেন। এই আকস্মিক স্থান পরিবর্তন ঘিরে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। স্থানীয় নেতারা জানান, নেতারা এখনো সফরের উদ্দেশ্য বা পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু জানাননি।
নেতাদের গতিবিধি ও অবস্থান ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সাদা পোশাকে হোটেলের আশপাশে সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে। তারা কখন ঢাকা ফিরবেন তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
গতকাল বেলা দেড়টার দিকে একটি ভিআইপি সাদা রঙের গাড়িতে তারা রয়েল টিউলিপ হোটেল ত্যাগ করেন। এরপর কক্সবাজার শহরে পৌঁছে কলাতলীর শালিক রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজ সারেন। বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে প্রাসাদ প্যারাডাইজে ওঠেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন এনসিপি নেতাকেও তাদের সঙ্গে দেখা গেছে। সংবাদকর্মীরা তাদের ফলো করলে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন উপস্থিত স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। গত মঙ্গলবার হঠাৎ কক্সবাজারে আসেন এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতা। তাদের আগমনকে ঘিরে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়। এমনকি তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠকের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ ও শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে বিষয়টি সত্য নয়। কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এনসিপির নেতারা মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার আসেন। পরে ইনানীর সি পার্ল বিচ রিসোর্টের (রয়েল টিউলিপ) ৫০০১, ৫০০২ ও ৫০০৩ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন। তিনি জানান, এনসিপির পাঁচ নেতার মধ্যে রয়েছেন- হাসনাত আবদুল্লাহ, সার্জিস আলম, ডা. তাসমিন জারা, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও খালেদ সাইফুল্লাহ। তারা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের গেট দিয়ে বের হয়ে যান। তবে সূত্রটি বলছে, তাদের সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন সার্জিস আলমের স্ত্রী। কক্সবাজার এয়ারপোর্টে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতার নামে কোনো বুকিং নেই।
পাঁচ নেতাকে শোকজ : এদিকে, এনসিপির পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে দলটি। গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে কক্সবাজার ভ্রমণ ও সেই ভ্রমণকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে পাঁচ নেতাকে এ নোটিস দেওয়া হয়েছে। দলের দপ্তর সম্পাদক ও যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত গতকাল এক নোটিসে এ নির্দেশ দেন।
এই পাঁচ নেতা হলেন-এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। তাদের কাছে পাঠানো পৃথক পৃথক নোটিসে বলা হয়, ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে আপনি এবং দলের আরও চারজন কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজার গিয়েছেন। এই সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা ব্যাখ্যা ‘রাজনৈতিক পর্ষদের’ নিকট পূর্বে অবগত করা হয়নি। এমতাবস্থায়, আপনার এই সিদ্ধান্তের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নিকট সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
কক্সবাজারে ঘুরতে যাওয়া এনসিপির পাঁচ নেতাকে শোকজ : গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভ করলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এ সময় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের মানুষের সামনে ২৪ দফার ইশতেহার দেওয়া হয়েছে। এই ২৪ দফার মধ্যে ২১ নম্বরে বলা হয়েছে, জলবায়ু সহিষ্ণুতা এবং নদী ও সমুদ্র রক্ষার কথা। তিনি বলেন, আমাদের বিশাল সম্ভাবনার জায়গা এই সমুদ্র। এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা কীভাবে এই সমুদ্রকে, আমাদের বায়োডাইভারসিটিকে রক্ষা করতে পারি; সমুদ্র তীরবর্তী মানুষের টেকসই জীবনধারণ কীভাবে নিশ্চিত করতে পারি। আমাদের আশঙ্কা, অনেক বাড়িঘর সমুদ্রে বিলীন হতে পারে। সে জন্য আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সেই জায়গায় সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। যেমন- দুর্যোগের যে পূর্বাভাস দেওয়া হয় সেগুলো যেন একটা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই দেওয়া হয়। যাতে ক্ষয়ক্ষতি কমে আসে। তিনি আরও বলেন, আমরা যেন সমুদ্রকে সম্পদে পরিণত করতে পারি। সমুদ্র থেকে যেন খনিজসম্পদ আহরণ করতে পারি এবং সেগুলো যেন টেকসই হয়। আমাদের টেকসই নদী ও সমুদ্র দরকার।সারজিস বলেন, আমরা দেখছি কক্সবাজারের যেখানে-সেখানে ভবন তোলা হচ্ছে। কোনো ব্যবস্থাপনা নেই।
যেখানে-সেখানে জমি দখল হচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে অবৈধভাবে জমি লিজ নিচ্ছে। সৈকতের পাড়ে প্রাচীর দেওয়া হচ্ছে। ভিডিওবার্তায় তিনি পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে সবাইকে সচেতন হয়ে ওঠার আহ্বান জানান।