‘এবারের গ্রীষ্মকালও বিগত কয়েক বছরের মতো পুরোপুরি লোডশেডিংমুক্ত হবে না। তবে লোডশেডিং সীমিত রাখার চেষ্টা করবে সরকার। এবার গরমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাবে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), কয়লাসহ প্রয়োজনীয় জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হবে। আশা করছি গ্রীষ্মে এবার বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহ ম্যানেজ করতে পারব।’ গতকাল রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে ‘এনার্জি ক্রাইসিস : ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এসব কথা বলেন। শেভরনের সঙ্গে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বলেন, ‘লোডশেডিং এবার সহনীয় মাত্রায় থাকবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য থাকবে। বিদ্যুৎসেবা সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা দেওয়া হয়। কারিগরি কারণে ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গরমে আবার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যায়। বিদেশি ক্রেতাদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ায় এলএনজি ও কয়লা আমদানিতেও এখন আর সমস্যা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পরই আমরা বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের পাওনা মেটানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। ফলে ৩ দশমিক ২ বিলিয়নের পাওনা কমিয়ে আমরা ৬০০ মিলিয়নে নামিয়ে আনতে পেরেছি। পাওনা পরিশোধের ফলে আগামী বছর থেকে এ খাতে আর ভর্তুকি বাড়বে না। বিদ্যুৎ খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে শোষণমূলক ট্যারিফে করা বিভিন্ন চুক্তি। এগুলো পুনরায় আলোচনা করে ঠিক করছি। এগুলো গণতান্ত্রিক আবহের মধ্যেই হবে। এছাড়া আগামী দুই মাসের মধ্যে গ্যাসের সিস্টেমলস ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনগুলো ঠিক করা হচ্ছে। গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিয়েও নজরদারি হচ্ছে।’ ফাওজুল কবির খান বলেন, এবার কাতার সফরে গিয়ে এলএনজি আমদানির জন্য যে চুক্তি হয়েছে তা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ ভিত্তিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাজ পেতে তারা বিডিংয়ে অংশ নেবে।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ক্রস বর্ডার চুক্তির কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানিকারক দেশে পরিণত হবে। গত ১৫ বছরে যদি গ্যাসের প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হতো তাহলে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের রাজস্ব ২০ শতাংশ কমে যেত। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে গণবান্ধব জ্বালানিনীতি কার্যকর করার জন্য আহ্বান জানান।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানিনীতিতে সংস্কার দরকার। সরকার যেভাবে এলএনজি প্রমোট করছে তা দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি রূপান্তরের সঙ্গে যায় না। তিনি সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য রি-টেন্ডারে যাওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে স্থলভাগের গ্যাস অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্ব দেন। বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে আওয়ামী লীগ সরকারের অপশাসনের কারণে দেশের অর্থনীতি চাপে পড়ে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান।