একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আপিলের ওপর আগামী ৬ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, সেদিন আপিলটি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে। এর আগে আজহারুলের করা আপিল শুনানির জন্য দিন নির্ধারণে গত সোমবার আরজি জানান তার আইনজীবী। গতকাল আপিলটি আদালতের কার্যতালিকায় ২৮ নম্বর ক্রমিকে ওঠে। আদালতে আজহারুলের পক্ষে ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। শুনানির সময় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ দলটির বেশ কয়েকজন নেতা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
পরে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতি বললেন মামলার গুণাগুণ বিশ্লেষণে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়া উচিত। আজকে (গতকাল) ছিল চারজনের বেঞ্চ। এখন আপিল বিভাগে আছে মোট সাতজন। এ জন্য গুরুত্ব বিবেচনায়, আইনি ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের বিবেচনায় মামলাটি আগামী ৬ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এক নম্বর আইটেম হিসেবে শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেন, আগে রায় দিয়েছিলেন পাঁচজন। আজকে (গতকাল) ছিল চারজন। এই জন্য ভবিষ্যতে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে এবং সঠিকভাবে যেন নিষ্পত্তি হয় এজন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে নতুন তারিখ নির্ধারণের পর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর যারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে অন্যায়ভাবে আটক ছিলেন, মজলুম ছিলেন, প্রায় সবাই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি না হওয়ায় আমরা বিস্মিত এবং ব্যথিত। তিনি বলেন, আমাদের মজলুম নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম। আনীত অভিযোগের তার বিরুদ্ধে কোনো সম্পর্ক নেই। তা আইনজীবীরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তারপরও আট মাস পার হয়েছে। আইনজীবী ও কোর্টের কাছে ব্যাখ্যা থাকতে পারে। কিন্তু সারা দেশে আমাদের লক্ষ কোটি নেতা-কর্মী যারা ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তারা ব্যথিত। তবে আমরা হতাশ নই। কারণ আমরা মনে করি আদালত সুবিচার করবেন। আমরা ধৈর্য ধরব। আমরা আদালতের নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় রিভিউ চেয়ে এ টি এম আজহারুল ইসলামের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ লিভের অনুমতি মঞ্জুর করে আদেশ দেন। সেই সঙ্গে পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। পরে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দেওয়া হয়। আপিল শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আজ আদালতে আরজি জানান আজহারুলের আইনজীবী। গতকাল আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আপিল শুনানির জন্য ৬ মে দিন নির্ধারণ করেন।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আজহারুলকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহারুল। এই আপিলের ওপর শুনানি শেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ রায় দেন। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন তিনি। এই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় মৃত্যুদণ্ড বহালের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউর পরিপ্রেক্ষিতে আজহারুলের করা আপিলের ওপর আগামী ৬ মে শুনানি শুরু হতে যাচ্ছে। আজহারুল বর্তমানে কারাগারে আছেন।