’২৪-এর চেতনা ধারণ করে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের এবারের শোভাযাত্রা। আগুনে পুড়িয়েও শোভাযাত্রায় ঠেকানো যায়নি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি। পয়লা বৈশাখের দুই দিন আগে শনিবার ভোরে এ প্রতিকৃতিটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। শোভাযাত্রা উদ্যাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, ফ্যাসিবাদের প্রতীক হিসেবে আমরা যেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিটি শোভাযাত্রায় উপস্থাপন করে জাতির সামনে স্বৈরাচারকে তুলে ধরতে না পারি সেজন্য আমাদের শিল্পী ও শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমকে ম্লান করে দিতে এই ঘৃণ্য কাজটি করা হয়েছে। তবে আমাদের শিল্পীরা থেমে থাকেনি। তারা ফ্যাসিবাদের প্রতীককে তুলে ধরেছেই। উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক এ এ এম কাওসার হোসেন টগর বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা মনে করেছিল আমাদের শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা দমে যাবে। তারা হয়তো জানে না, যেই প্রজন্ম ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পালাতে বাধ্য করতে পারে সেই প্রজন্ম নতুন আরেকটি প্রতীক বানাতেও পারে।
প্রাণের উচ্ছ্বাসে উদযাপন করা হয়েছে পয়লা বৈশাখ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হন। সোমবার সাদার সঙ্গে বিপ্লবের রং লালের সমন্বয়ে পোশাকে বৈশাখ ও দেশজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরেছে গোটা জাতি। হাটে, ঘাটে ও গ্রামের মেঠোপথে বসেছিল বৈশাখী মেলা। আনন্দ শোভাযাত্রাসহ বর্ণিল আয়োজনে ২৪-এর বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করেছে সারা দেশ।
আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বর্ণিল আয়োজনে বঙ্গাব্দ ১৪৩২ বরণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। জুলাই অভ্যুত্থানে অগণিত ছাত্র-জনতার রক্তের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশ মুক্ত হওয়ার পর নতুন বাংলাদেশের বর্ষবরণে সারা দেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চারুকলার এবারের আনন্দ শোভাযাত্রাটি। আর শিল্পীরাও তাদের প্রতিবাদে তুলে ধরেছেন পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট ও তার সব অপকর্ম। নতুন বাংলাদেশে আর যাতে কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান না ঘটে সেই প্রত্যাশায় এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল- ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। কেউ প্রতিবাদের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে আবার কেউ আবহমান বাংলার গ্রামীণ সাজে অংশ নেন এই শোভাযাত্রায়।
শোভাযাত্রায় সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সুন্দরের জয়গান গায় সর্বস্তরের জনসাধারণ। ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ জানায় সর্বস্তরের মানুষ। এ ছাড়া কৃষককে গুরুত্বপূর্ণ থিম হিসেবেও তুলে ধরা হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, চারুকলা অনুষদের ডিন আজহারুল ইসলাম চঞ্চল, শোভাযাত্রা উদযাপন পরিষদের সদস্যসচিব ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক এ এ এম কাওসার হোসেন টগরসহ শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা। সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অংশ নেয় বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বামবা), সাধু ও বাউল ও নারী ফুটবলাররা। চারুকলা অনুষদের ডিন ও শোভাযাত্রা উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, নাম পরিবর্তন হয়নি, পুনর্বহাল করা হয়েছে। এদিকে এনিগমা মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের সহযোগিতায় নববর্ষ উদ্যাপন করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)। আড্ডা, স্মৃতিচারণা, আপ্যায়ন, শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে সাজানো ছিল অনুষ্ঠান।