রাজধানীতে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সাময়িক স্বস্তি মিলছে। তবে সমস্যার সমাধান হয়নি, অনিশ্চয়তাও কাটেনি। ৯০ দিন পর কী হবে সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। এজন্য তারা সরকারের নীতি সংস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করাসহ সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল ‘ইউএস ট্যারিফ অন বাংলাদেশে এক্সপোর্ট : রিসিপ্রোক্যাল স্ট্র্যাটেজিক্যাল অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড ফর নেগোসিয়েশন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বিটিএমএ এ সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। আলোচনায় অংশ নেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ, ??বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমরা ১৮০ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুতা আমদানি করে থাকি। যুক্তরাষ্টের কাছে আমাদের আবদার হলো- আমেরিকার সুতা দিয়ে তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া। অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে আমাদের এ সুবিধা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও আমাদের জিরো ট্যারিফ দেবে বলছে। এক্ষেত্রে আমেরিকারও সুযোগ আছে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ স্থগিত করেছেন। আমরা জানি না ৯০ দিন পরে কী হবে? তাই আমাদের কী করা দরকার, কোন জায়গায় কী সুযোগ নিতে পারি, ট্রাম্প প্রশাসনকে কী প্রস্তাব দেওয়া যায়, এগুলো নিয়ে আমাদের দ্রুত কাজ করতে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের বাণিজ্য বাড়ানোসহ সরকারিভাবে ডিউটি ফ্রি জোন করা, কটন ওয়্যার হাউস ও এনবিআর রেগুলেটরি প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, ৯০ দিনের এ সময়কে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। কূটনৈতিকভাবে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। তিনি নীতি সংস্কার ও বন্ড সুবিধা চালু করার দাবি জানান।
বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, চায়নার ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক অরোপকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এর মাধ্যমে চায়নার মাকের্টে আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারব। তবে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে এসএমই খাতের চ্যালেঞ্জ বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিসিআই চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, এ শুল্ক পুরো বিশ্বের সিস্টেমকে পরিবর্তন করে দিয়েছে। এটা ভূরাজনৈতিক একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে। এজন্য আমরা এফটিএ, পিটিএ চুক্তি করতে পারি। যা ভিয়েতনাম করেছে।
এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলে ব্যবসা টিকবে না। এটা অবাস্তব অবস্থা। এজন্য আমাদের ব্যবসার গ্যাপ কমিয়ে আনতে হবে। আমরা যুক্তরাষ্টের সঙ্গে এফটিএ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম- নানান ইস্যু দেখিয়ে তারা রাজি হয়নি। এখানে আলোচনা এসেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সুতা ক্রয় বাড়ানোর। সুতা ক্রয় বাড়ালে তাদের সুতার দাম বেড়ে যাবে। তখন অন্য যারা সুতা বিক্রি করবে তাদের কাছ থেকে কম দামে সুতা ক্রয় করা যাবে।