বাড়ির চারপাশে ঘেরা গাছগাছালি। গাছে বসে নানান রঙের পাখি। তাদের ডাকেই মুখরিত হয় চারদিক। সকালে পাখির ডাক শুনে ঘুম ভাঙে ছোট্ট টুটুলের। পাখির ডাকে সে আনন্দে মেতে ওঠে। বন্ধু সুমনকে নিয়ে চারপাশ ঘুরে দেখে। গাছের নিচে ধান ছিটিয়ে দেয় টুটুল। পাখিরা নিশ্চিন্তে এসে ধান খায়। পাখিদের সঙ্গে টুটুল আর সুমনের কত কথা! পাখিরাও আনন্দে নাচে, আর দুজন মিলে তা উপভোগ করে।
টুটুল বলল, ‘বন্ধু, চলো বাড়ি যাই। স্কুলে যেতে হবে।’ মা নাহিদা বললেন, ‘বাবা, ঘর থেকে এভাবে খাবার নিয়ে পাখিদের দিতে হবে না। ওরা জঙ্গল থেকে খাবার খুঁজে খায়।’ টুটুল বলল, ‘মা, তুমি তো আমাকে রান্না করে খাওয়াও, আদর করো। পাখিদের তো কেউ খাওয়ায় না, আদরও করে না।’ মা বললেন, ‘তাই তো! তুমি ঠিক বলেছো। শোনো টুটুল, ওরা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়, গাছের ফল, মাছ, পোকামাকড় খেয়ে বাঁচে।’ টুটুল বলল, ‘মা, তাহলে তো বেশি বেশি গাছ লাগাব। সেই গাছের ফল খাবে পাখি। সেই সঙ্গে আমরাও ফল খেতে পারব। অক্সিজেন পাব।’
এদিকে মহিউদ্দিন দাদু বাড়ির বড় মোটা গাছটি বিক্রি করে দেন। যারা গাছ কিনেছে, তারা দু-এক দিনের মধ্যে গাছ কাটতে আসবে। টুটুল দৌড়ে গিয়ে দাদুকে বলল, ‘দাদু এই গাছটা বিক্রি করো না! পাখিরা কোথায় থাকবে?’ দাদু বললেন, ‘এই গাছ বিক্রি করে সংসার চালাবো।’
টুটুল ছুটে গিয়ে মাকে জানায়। মা শুনে, চিন্তিত হয়ে বলেন, ‘দেখি বাবা, কী করা যায়।’ মা ছেলেকে নিয়ে দাদু মহিউদ্দিনের কাছে গিয়ে বলেন, ‘এই গাছ কাটা যাবে না। এত পাখি কোথায় যাবে?’ মহিউদ্দিন বললেন, ‘মানুষের কথা না ভেবে পাখির কথা ভাবছো? আমার চুলায় হাঁড়ি চড়ে না!’
টুটুল বলল, ‘মা, আমরা গাছটা কিনে নিই না?’ মা বললেন, ‘তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলে দেখি টাকা জোগাড় করা যায় কি না।’
মহিউদ্দিন রাজি হয়ে বলেন, যদি টাকা দেওয়া যায়, তাহলে গাছটা তোমরা পাবে। মহিউদ্দিন গাছের জন্য যে সময় দিয়েছেন সেই সময়ের মধ্যে গাছের টাকা দেওয়া হয়নি। যারা গাছ কিনেছে তারা এসেছে গাছ কাটার জন্য। টুটুল সুমনকে বলল, ‘গাছে পাখির বাসায় ছানা আছে!’ সে গাছে উঠে ছানাগুলো ব্যাগে ভরে রশি দিয়ে নিচে নামায়। সুমন নিচে বসে ছানাগুলো নিরাপদে রাখে। গাছের এক চিকন ডালে উঠে টুটুল, পাখির ছানা আনতে গিয়ে টুটুল গাছের ডাল ভেঙে পড়ে যায়।
সুমন দৌড়ে গিয়ে খবর দেয় টুটুলের বাবা-মাকে। বাবা মোতাহার আর মা নাহিদা এসে ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান। পথে দেখা যায়, অনেক পাখি টুটুলের সঙ্গে উড়ে যাচ্ছে! সবাই অবাক! পাখিরা ডাকাডাকি করে টুটুলের জন্য অস্থির হয়ে ওঠে।
টুটুলের চিকিৎসা চলতে থাকে। টুটুল বলল, ‘মা, আমার কিছু হয়নি। আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো। পাখিরা না খেয়ে থাকবে!’ সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
টুটুল বাবাকে জিজ্ঞেস করে, ‘ওই গাছটা কি কেটে ফেলেছে?’ বাবা মোতাহার বলেন, ‘না বাবা, গাছটা এখন আমাদের। আমি মহিউদ্দিন চাচার কাছ থেকে জায়গাসহ গাছ কিনে নিয়েছি।’ বাবা-মা দুজনে মিলে বললেন, ‘আমাদের ছেলে যেখানে গাছ আর পাখির পাগল, সেখানে তো কিনতেই হয়!’
টুটুল খুশিতে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে। বলল, ‘আমরা গাছ কাটবো না, বরং আরও গাছ লাগাবো। যাতে পাখিরা বেশি করে এসে বসতে পারে।’ সে বাবাকে নিয়ে গাছ লাগায়। সুমনকে নিয়ে চারপাশ ঘুরে দেখে। পাখিরা উড়ে উড়ে ডাকে।
এখন সবাই টুটুলদের বাড়ি ‘পাখির বাড়ি’ বলে চেনে। টুটুলও খুব আনন্দিত যে তাদের বাড়ি এখন সত্যিই পাখির বাড়ি!