এক বছরে টেকনাফ ২ বিজিবি বিভিন্ন অবৈধ মালামালসহ ১৭৯ জন আসামি গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করেছে মাদক, অস্ত্র, স্বর্ণ। এছাড়া অপহরণকৃত ৩৮৭ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার এবং ৮৭ জন মানবপাচারকারীকে আটক করেছে।
টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান এই ব্যাটালিয়নের ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর টেকনাফ ব্যাটালিয়ন উদ্ধার করেছে দুই কেজি স্বর্ণ, ৪ কেজি ক্রিস্টাল মেথ আইস, আটক করেছে ৫৭ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট এবং উদ্ধার করেছে দেশী-বিদেশী অস্ত্র- এ-৩ রাইফেল-৩ টি, এলজি-৪টি, বিদেশী পিস্তল-৪টি, ওয়ান সুটার গান-৫টি, রামদা-৮টি, দেশীয় কিরিচ-৮টি, এক নলা বন্দুক-২টি, চাকু-৪টি, চাপাতি-১টি ও চাইনিজ কুড়াল-১ টি।
এছাড়াও উদ্ধার করা হয়েছে গ্রেনেড-৪টি, রকেট বোম্ব-১টি, তাঁজা গুলি-৬৬৭ রাউন্ড, কম্পাস-১টি, ম্যাগাজিন-৪টি, রকেট লাঞ্চারের গোলা-১টি, খালি ম্যাগাজিন-৪টি, প্লাস্টিকের ম্যাগাজিন-১টি, হাত বোমা-৬৯টি, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি-২.৯ কেজি, পিস্তলের গুলি-১টি, ওয়ান সুটার গান গুলি-৬টি ও এক নলা বন্দুকের গুলি-২টি।
এই এক বছরে ২১৮ কোটি ২৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের মাদক ও চোরাচালান জব্দ করেছে এই ব্যাটালিয়ন। মিয়ানমারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ৩৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও নিরস্ত্রীকরণ নিশ্চিত করেছে।
গত এক বছরে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন অপহরণকৃত ৩৮৭ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার এবং ৮৭ জন মানবপাচারকারীকে আটক করেছে এবং বিজিবির নিরলস প্রচেষ্টায় আরাকান আর্মির নিকট আটককৃত ১২৪ জন বাংলাদেশি জেলে, কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ১৮ টি নৌকা ও বিপুল পরিমাণ জাল ফেরত আনা হয়েছে। এছাড়াও মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ৪৪০ জনকে শীতবস্ত্র বিতরণ, ৮টি মেডিকেল ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ১০৯৭ জনকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সময়ে প্রান্তিক পর্যায়ে প্রায় ১০০০ জন অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রধান করা হয়েছে।
লে. কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, ৭৭ বছরের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে ৩৪ জন বীর সেনানীর রক্তে লেখা আমাদের মুক্তির গল্প। বহু সাহসী যোদ্ধা পেয়েছেন ‘বীর প্রতীক’ তাদের আত্মত্যাগ জ্বলজ্বল করে প্রতিটি সূর্যোদয়ে। ১৯৭৯-১৯৮০ সালে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই ব্যাটালিয়নের পাঁচ সদস্য শাহাদাত বরণ করে। ১৯৯৯ সালে অর্জন করে ‘বাংলাদেশ রাইফেলস্ স্ট্যান্ডার্ড পদক।
বিজিবির ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র ইউনিট হিসেবে অত্যাধুনিক নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপন করে ৩০ কিলোমিটার উপকূল এবং ২৩ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। মাদকের বিরুদ্ধে অন্তহীন যুদ্ধে ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮- টানা তিন বছর “বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি”জয় করে গড়েছে অভূতপূর্ব কীর্তি। ক্রিস্টাল মেথ আইস, ইয়াবা-এই মরণ বিষের বিরুদ্ধে নিরলস যুদ্ধে 'অপ্রতিরোধ্য শক্তি 'টেকনাফ ব্যাটালিয়ন' এর রয়েছে সাফল্যের অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মহেন্দ্র ক্ষণে যাদের আত্মত্যাগে, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন এই মর্যাদায় আসীন-তাঁদের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমাদের উপর অর্পিত যে কোন দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে পিছপা হবে না এবং প্রয়োজনে দেশ মাতৃকার অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিতে কুণ্ঠাবোধ করবো না’’।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন