রংপুরে এলপিজি ফিলিং স্টেশনে ভয়াবহ ট্যাংক বিস্ফোরণে সেলিম রেজা (৪৫) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। আহতদের মধ্যে ১৩ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের সর্দার রুমের ইনচার্জ সেলিম মিয়া।
ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে রংপুর সিও বাজার এলপিজি অটোগ্যাস অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারে গ্যাস লিকেজ হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। শনিবার সকাল থেকে ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ গ্যাসের ট্যাংক মেরামত করছিল। বেলা ১২টার দিকে ওয়েল্ডিংয়ের সময় হঠাৎ করে ট্যাংকের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে করে গ্যাস ট্যাংকটি ছিন্নভিন্ন হয়ে উড়ে পার্শ্ববর্তী কাউন্টারের কাছে গিয়ে পড়ে। কাউন্টারসহ ফিলিং স্টেশনে থাকা প্রায় ১৩টি কার ও অ্যাম্বুলেন্স, রাস্তায় চলাচল করা একটি যাত্রীবাহী বাস ও পার্শ্ববর্তী বাড়ির টিনের চাল, বহুতল ভবনের জানালা ভেঙে যায়। বিস্ফোরণের ফলে ট্যাংকের উপরে থাকা পাকা অবকাঠামো গুড়িয়ে যায় এবং কিছু লোহার অ্যাঙ্গেল পার্শ্ববর্তী বিজিবি রংপুর রিজিয়ন সদর দপ্তরের গাছে গিয়ে আটকে যায়।
গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের পরপরই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দ্বিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। আশপাশের লোকজন ছুটে এসে এলপিজি ফিলিং স্টেশনে পড়ে থাকা আহতদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ কাজী মো. আতাউর রহমান জানান, গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতরা হলে- অজ্ঞাত কিশোর (১৬), ছালেক শাহ (৬৫), তারাজুল (৪৫), আলমগীর (২২), সোহেল (৩৭), বিপুল (৫২), রফিক (৩৫), সোহাগ (২৭), বকুল (২৪), মজিবর (৪৫), অজ্ঞাত পুরুষ, সাদমান (১৮) ওরোজীকে (৫০) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, সার্জারি বিভাগ (পুরুষ ও মহিলা), নাক, কান, গলা বিভাগ ও নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে, উৎসুক মানুষের কারণে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তাদের তৎপরতায় জনজট কাটিয়ে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এলাকাবাসী মমিনুর রহমান বলেন, আমি বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হলে ঝাকুনিতে আমার ঘুমে ভেঙে যায়। পরিবারের সদস্যরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমার বাসার টিনের চাল, টিভি, ফ্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সাথে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পথচারী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি পাশের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। বিকট শব্দে বিস্ফোরণের কারণে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। গত ৩ থেকে ৪ দিন ধরে পাম্পটি বন্ধ ছিল। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেদিকে কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখতে হবে।
রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক বাদশা মাসউদ আলম বলেন, আমরা ১২টা ১০ মিনিটে সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। এসে দেখি আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং আগুনও নিভে গেছে। গত সপ্তাহে আমরা এই ফিলিং স্টেশনে গ্যাস লিকেজের ঘটনায় পরিদর্শনে এসেছিলাম।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ