মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে যানজট ও দুর্ঘটনা হ্রাস করে জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন। মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন তারা। কিন্তু তাদের এসব চেষ্টা ব্যর্থ করছেন চালকসহ সাধারণ জনগণ। ফলে প্রতি মুহূর্তে ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। অকালে ঝরে যাচ্ছে শতশত প্রাণ। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে হাইওয়ে পুলিশ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরে বগুড়া হাইওয়ে পুলিশ রিজিয়নের আওতাধীন সকল থানা ও ক্যাম্পের মহাসড়ক দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাত্রী পরিবহন প্রতিরোধ, সড়কে পাকিং ঠেকানো, স্পিডগান দিয়ে গতি পরীক্ষা, ওপেন হাউজ ডে, কমিউনিটি পুলিশিং, চালক হেলপার, পরিবহন মালিক সমিতি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক সভাসহ মোট ৩২০টি সভা করেছে হাইওয়ে পুলিশ। রাতে মহাসড়কে নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে টহল জোরদার রেখেছে থানা পুলিশ। এছাড়া মাদক উদ্ধারে সড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম করা হচ্ছে।
বগুড়া হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে শুরু করে মে মাস পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন মহাসড়কে ১০৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়ক দুর্ঘটনা নিহতের সংখ্যা ১০০জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮১ জন। মহিলা ১৭জন ও শিশু ২জন। আহতের সংখ্যা ৮৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭০ জন, মহিলা ১১জন ও শিশু ২জন। সর্বশেষ পবিত্র ঈদুল আজহার দিন সকালে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার নয়মাইল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় বাবা-ছেলে। এ ঘটনায় বাসচালককে গ্রেফতার করেছে হাইওয়ে পুলিশ। একসই সাথে বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের অভিযানে ১২২ কেজি গাঁজা, ৭৩ বোতল ফেন্সিডিল, ১টি বিদেশী মদ, ৫৫০ বোতল এনার্জি ড্রিংস উদ্ধার করেছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭লাখ টাকা। এসব ঘটনায় ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে ১০জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মহাসড়কে চোরাচালন রোধে ১টি পিকআপ, ১৫টন নিষিদ্ধ পলিথিনসহ একটি ট্রাক জব্দ করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
জানা যায়, দুর্ঘটনা হ্রাস এবং মানুষের জীবন রক্ষায় চালক ও চালকসহকারীসহ সাধারণ যাত্রীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মহাসড়কের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়ন। পাঁচ জেলায় একসাথে মহাসড়কের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরা। তবুও এখনো নিরাপদ হয়ে উঠেনি এ অঞ্চলের মহাসড়ক। চালকসহ সাধারণ মানুষ সচেতন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশ শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে। মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ নসিমন-করিমন, সিএনজি, অটোরিক্সা মূল সড়কে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে কেউ। হাইওয়ে পুলিশ মামলা দিয়েও তাদের থামাতে পারছে না। মহাসড়কের কোথাও কোথাও এখনো বসে হাট বাজার, বসে দোকান পাট। ইচ্ছেমত যানবাহন পার্কিং করায় লেগে থাকে যানজট। কোন কোন বাসস্ট্যান্ডে হয়রানির শিকার যাত্রীরা। মহাসড়ক দিয়ে ট্রাকগুলো এখনো চলছে ওভারলোডিং নিয়ে। এদিকে ঈদ পরবর্তী ঘরমুখো মানুষেরা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মস্থলে ফিরছেন। নিরাপদে তাদের কর্মস্থলে ফিরতে হাইওয়ে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা মাঠে রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, ভটভটি, নসিমন-করিমন, সিএনজি, অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলো তাদের নির্ধারিত সড়ক ছেড়ে মূল সড়কে চলে আসছে। নিষেধ করার পরেও তারা কিছুই মানছে না। এছাড়া সড়কে যেখানে-সেখানে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, মাদক ও চোরাচালান বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। যেমন-মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, থ্রি-হুইলার নিয়ন্ত্রণ ও মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ। তারা আরো জানান, মহাসড়কে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ দুর্ঘটনা হচ্ছে পথচারীদের সচেতনতার অভাবে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সবসময় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, পোস্টারিং ও সভা-সেমিনার করা হচ্ছে।
বগুড়া রিজিয়নে রাজশাহী বিভাগ ধরা হলেও কার্যক্রম আছে ৫টি জেলায়। জেলাগুলো হলো বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও রাজশাহী। পাঁচ জেলার মধ্যে বগুড়া সীমানার হাইওয়ে পুলিশের দুই ক্যাম্প মিলিয়ে নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বগুড়া-নাটোর মহাসড়ক, সিরাজগঞ্জের নলকা-হাটিকুমরুল, বগুড়ার শেষ সীমানা রহবল, রাজশাহীর বানেশ্বর পর্যন্ত। এছাড়া কুষ্টিয়ার লালনশাহ সেতু পর্যন্ত হাইওয়ে পুুলিশ বগুড়া রিজিয়ন এর সীমানা। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে পাবনা পাকশি হয়ে দাসুরিয়া পর্যন্ত জননিরাপত্তার জন্য কাজ করছেন তারা।
হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া রিজিয়নের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. শহিদ উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সড়ক প্রশস্ত হওয়ায় চালকেরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে যায়। একদিকে চালকেরা গতিসীমা লঙ্ঘন করছে। অন্যদিকে পথচারীরা নিয়ম মানছে না। ফলে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জনসচেতনায় ওপেন হাউজ ডে, মাইকিং, কমিউনিটি পুলিশিং, চালক হেলপার, পরিবহন মালিক সমিতি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভা-সেমিনার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে চালক-মালিক ও সাধারণ মানুষদের সচেতন হতে হবে। হাইওয়ে পুলিশ এ অঞ্চলের জননিরাপত্তায় আরও নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন