চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই কবির হোসেনের বিরুদ্ধে মাদকসহ আসামি ধরে লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের পর ১৫১ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবহিত হয়েছেন এবং গতকাল শনিবার পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানান, সদর মডেল থানার ওসি মোঃ মতিউর রহমান। অভিযোগে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নতুনহাট এলাকা থেকে তিন বোতল বিদেশি মদসহ (রয়েল স্ট্যাগ) নামোশংকবাটি উজ্জ্বলপাড়ার বাদশা আলীর ছেলে নাঈমকে আটক করে পুলিশ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই কবির হোসেন। সঙ্গে ছিলেন এএসআই আমিনুল ইসলাম। আটকের পর ঘুষ নিয়ে পরদিনে বুধবার তাকে ১৫১ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার একাধিক পুলিশ সদস্য বলেছেন, জব্দ করা মদ গায়েব করে জামিনযোগ্য ধারায় আটককৃত নাঈমকে আদালতে পাঠানো হয়। এদিকে মাদকসহ আটককৃতকে ঘুষের বিনিময়ে সুবিধা দেয়ার ঘটনায় খোদ থানা পুলিশের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিদেশি মদসহ আটককৃত নাঈম বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়া করছেন, তাই মাদক মামলা হলে বিদেশ যেতে পারবেন না, সেই সহানুভূতি থেকে তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যদিও সদর মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই কবির হোসেনের বিরুদ্ধে সালিশের নামে অর্থ আদায়সহ হত্যা মামলার ভয় দেখিয়েও অর্থ আদায়ের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
তবে মাদক উদ্ধার অভিযানে জসিম উদ্দীন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিদেশি মদসহ একজনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন শুনছি এলাকাতেই আছে পুলিশের হাতে আটক হওয়া নাঈম। তার দাবি, মাদকসহ আটকের পর এভাবে ছাড়া পেলে এ এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা আরও উৎসাহিত হবে। এ বিষয়ে এসআই কবির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদেশি মদসহ গ্রেফতার নাঈম হাসানকে আদালতে চালান করা হয়েছে বলে জানান। তবে আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাকে মাদক মামলায় নয়, আদালতে সোপর্দ করা হয় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারায়। পরে এসআই কবির হোসেন বলেন, এটা অনেক ফ্যাকড়া (জটিলতা) ছিল। ওই ছেলেটা বিদেশ যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। মামলা দিলে আর বিদেশ যেতে পারতেন না, এজন্য একটু ছাড় দেয়া হয়েছে। অপরদিকে মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সদর মডেল থানার ৪৪৮ নং জিডি মূলে কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকের মাধ্যমে ওই যুবককে আদালতে সোপর্দ করেন এসআই হরেন্দ্রনাথ দেব দাশ। আদালতে দেয়া পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় সন্দেহভাজন গ্রেফতারের কথা বলা হলেও সাক্ষী করা হয়েছে সদর মডেল থানার পরিচ্ছন্নতাকর্মী শ্রী জনি ভুঁই মালীকে। তবে শ্রী জনি ভুঁই মালী জানান, তিনি সদর মডেল থানার পরিচ্ছন্নতাকর্মী- ঘটনাস্থলেও ছিলেন না এবং তাকে সাক্ষী করা হয়েছে এটিও তিনি অবগত নন। এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. মতিউর রহমান বলেন, পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্তের জন্য সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
বিডি প্রতিদিন/এএ