লালমনিরহাটের আদিতমারীতে প্রায় ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে। প্লাসাইটিংয়ের গাঁথুনি এক দিন পরই খুলে পড়ছে। তদারকি সংস্থার চিঠি, মৌখিক নিষেধ কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘কিছু নিম্নমানের ইট ভুলে শ্রমিকরা ব্যবহার করেছে। পরে প্লাসাইটিং ভেঙে আবার গাঁথুনি করা হয়েছে।’ প্রকল্পের সুপারভাইজার উপসহকারী প্রকৌশলী পারভেজ রুবেল বলেন, ‘ভাঙা ইট পুনরায় ব্যবহার করায় প্লাসাইটিংয়ের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। অন্য অংশের কিছু কাজ সন্তোষজনক হয়েছে।’ আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘কাজের শুরু থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। মৌখিকভাবে বহুবার বলেছি, পরে চিঠিও দিয়েছি। দ্বিতীয় দফায় আবার চিঠি দেওয়া হবে। বিধি অনুযায়ী আমরা প্রতিষ্ঠানটির (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদিতমারীর ভেলাবাড়ী বাজার জিসি থেকে দুর্গাপুর জিসি সড়কটি বহুদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী। এ সড়কের উন্নয়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯ দশমিক ২২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সড়কটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০২৫ সালের আগস্টে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেক শেষ হয়নি। সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে দুই কিস্তিতে বিলও বুঝে নিয়েছে।
প্রথম থেকেই সড়কের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তোলে স্থানীয়রা। এলজিইডির স্থানীয় কার্যালয় বারবার মৌখিক ও লিখিতভাবে সতর্ক করলেও ঠিকাদার কার্যত অগ্রাহ্য করে গেছেন। অভিযোগ আছে, সড়কের পাশের ছয়টি পুকুরে প্লাসাইটিং করা হয়েছে নিম্নমানের ইটে। সেখানে এক নম্বর ইট ও সিমেন্টের মানসম্মত মিশ্রণের বদলে অধিক বালু ও কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। গাঁথুনি ভেঙে পড়ার পর এলাকাবাসীর প্রতিবাদে নতুন করে দেয়াল তুললেও দেওয়া হয়েছে সেই ভাঙা ইটই।
স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল বলেন, ‘সিমেন্ট তো নেই বললেই চলে, শুধু বালু দিয়ে কোনোভাবে ইট লাগিয়ে ফেলা হয়। কাজ শেষ হলে গাঁথুনি ঢেকে ফেলা হয় মাটি দিয়ে। পরে কিছু বোঝা যায় না।’
স্থানীয় একজন ঠিকাদার জানান, প্রকল্পটি বগুড়ার এক ঠিকাদারের কাছ থেকে বেশি কমিশনে কিনে নেয় লালমনিরহাটের একটি প্রভাবশালী মহল। ফলে লোকসান ঠেকাতে কাজের মান রক্ষা করা হচ্ছে না।