তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক সংকটে এখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা। বর্তমানে ৩২ জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন মাত্র পাঁচজন। সংকট রয়েছে অন্য জনবলেরও। রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
ডিমলা উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষের বসবাস। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ৩০০ থেকে ৪০০ জন। ওষুধ ও শয্যাসংকটও রয়েছে এখানে। বাধ্য হয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নেন অনেক ভর্তি রোগী। জনবল সল্পতার কারণে সেবা না পেয়ে ফিরে যান কেউ কেউ। ৫০ শয্যার সরকারি এ হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন ৮০-১০০ জন। শয্যা না থাকায় অনেকের জায়গা হয় বারান্দায়। আউটডোরেও থাকে রোগীর লম্বা লাইন। সূত্র জানায়, ডিমলা কমপ্লেক্সে নার্সের ৪০টি পদের মধ্যে রয়েছেন ২৭ জন। ফিল্ড স্টাফের ১২টি পদের বিপরিতে কর্মরত আছেন পাঁচজন। ফার্মাসিস্ট, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, কার্ডিওগ্রাফার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ওয়ার্ডবয়ের ৭০ পদের ৩৮টিই ফাঁকা। প্যাথলজি বিভাগে জনবল না থাকায় রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে হয়। চিকিৎসা নিতে আসা সুস্মিতা রানী বলেন, ‘ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখানে কোনো ফ্যানের ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ ওষুধও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।’ উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাহাট এলাকার আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছিলাম। গাইনি ডাক্তার না থাকায় শুধু ওজন ও প্রেসার মেপেছে।’
খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ছবি বেগম বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ে এসেছিলাম। ডাক্তার না থাকায় ফেরত যাচ্ছি।’ এমন অভিযোগ করেন বাবুহাট এলাকার বাসিন্দা মতিয়ার রহমান ও সুন্দরখাড়া গ্রামের রমজান আলীও।
ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক নিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। প্রতিদিন ইনডোর এবং আউটডোর মিলিয়ে ৩০-৪০০ রোগী চিকিৎসা নেন থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। এত সীমিত জনবল নিয়ে বিপুল সংখ্যক রোগীর সেবা দেওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’