রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছ উদ্বৃত্ত জেলা নাটোর। এ জেলায় প্রতি বছর ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টনেরও বেশি উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় বিক্রির জন্য। ফলে জেলার সাড়ে ১৮ লাখেরও বেশি জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে, পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ২৫ হাজার ৮৫০ জন মৎস্যচাষি। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, নাটোরে বছরে বাণিজ্যিকভাবে মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ৭৮ হাজার ৬৩৮ মেট্রিক টন। আর প্রায় ১৭ হাজার ৮৬৬ মেট্রিক টন পাওয়া যায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে। জেলায় বছরে মাছের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। যা রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বৃত্ত মাছ। এই বিভাগে দ্বিতীয় সর্বচ্চো উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদনকারী জেলা নওগাঁ, তৃতীয় রাজশাহী, চতুর্থ বগুড়া, পঞ্চম পাবনা এবং ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে জয়পুরহাট। চাহিদার তুলনায় মাছ উৎপাদনে ঘাটতিতে আছে সিরাজগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। মৎস্য বিভাগের মতে, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মাছ নাটোর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৬০ ট্রাক যায় ঢাকাসহ সারা দেশে। মৌসুমে যা প্রতিদিন গড়ে দাঁড়ায় ২৪০-২৫০ ট্রাক।
সূত্র জানায়, প্রতি বছর উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হয় নাটোরে ৩৪ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন, নওগাঁয় ২৬ হাজার ৭৮৯, রাজশাহীতে ২৪ হাজার ৬৬৬, বগুড়ায় ২২ হাজার ৭০০, পাবনায় ১০ হাজার ৮৮৫ ও জয়পুরহাটে ৫ হাজার ৪১৬ মেট্রিক টন। সিরাজগঞ্জ জেলায় ৫৪১ মেট্রিক টন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাছের ঘাটতি থাকে ১৮ হাজার ৬৮ মেট্রিক টন। নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ জেলায় প্রতি বছর চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত মাছ উৎপাদন হওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ২৫ হাজার ৮৫০ জন মৎস্য চাষিসহ সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর খাদ্যে আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে। উদ্বৃত্ত মাছ পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন জেলায়। এ জেলায় উৎপাদিত মাছ সরাসরি ভারতেও রপ্তানি হয়। রপ্তানি খাত থেকে বছরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে নাটোরের মাছ।
তিনি বলেন, মাছচাষিরা উদ্ভাবিত নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন বাড়ছে, অন্যদিকে মাছ সরবরাহ ব্যবস্থা সহজীকরণ ও ভালো দাম মিলছে। এ খাত থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় প্রতিনিয়ত জেলায় মাছ চাষের পরিধি বাড়ছে। এ ছাড়া প্রতি বছর বর্ষাকালে প্রাকৃতিক উৎস প্লাবন ভূমি থেকে মাছ উৎপাদনও আশানুরূপ হওয়ায় সুফল পাচ্ছেন বিপুল সংখ্যক মৎস্যজীবী। মাছ চাষে উৎসাহ সৃষ্টিসহ উৎপাদন বাড়াতে মৎস্য বিভাগ থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ অব্যাহত রয়েছে।