রাজধানীর যানজট নিরসনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২২টি মোড়ে নতুন করে দেশি প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। হাই কোর্ট থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যে সাতটি মোড়ে সিগন্যাল বাতিসহ সরঞ্জাম স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অনুমতি দিলে যে কোনো সময় উদ্বোধন হতে পারে। এ পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর প্রতিটি মোড়ে এসব সিগন্যাল স্থাপন করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পাইলট প্রকল্পের আওতায় ২২টি স্পটে এ সিগন্যাল বাতি লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। দেশি প্রযুক্তিতে কম খরচে বাতিগুলো বসানো হবে। এ প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও জাহাঙ্গীর গেট মোড়ে এটি স্থাপন করা হয়েছে। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে শিক্ষা ভবন মোড়, কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড় হয়ে মিন্টো রোডের মোড়ে বসবে। পরে মহাখালী, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর হয়ে আবদুল্লাহপুর মোড় পর্যন্ত ২২টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে দেশি প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হবে। ট্রাফিক সিগন্যালটিতে অটোমেটেডের পাশাপাশি ম্যানুয়াল অপশনও রাখা হয়েছে। এ সিগন্যাল বাতি দুভাবে কাজ করবে। এটি সেমি অটোমেটেড সিগন্যাল এইড। একটা বাটনের (বোতাম) মাধ্যমে এ ব্যবস্থাকে ম্যানুয়াল আবার অটোমেটেড (স্বয়ংক্রিয়) করা যাবে। কম যানবাহন থাকলে নির্ধারিত সময়ের জন্য অটোমেটেড মুডে চলবে। বেশি থাকলে ম্যানুয়ালি সময় পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে।
সরেজমিন ফার্মগেট ও বিজয় সরণি ট্রাফিক সিস্টেম ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক বাতির ল্যাম্প পোস্ট লাগানো হয়েছে। প্রতিটি ল্যাম্পে বাতির সঙ্গে সিসি ক্যামেরা, টাইম স্কিনার ও মাইক লাগানো হয়েছে। একই সঙ্গে কন্ট্রোল রুমগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে একটি বড় ডিসপ্লে। এ ডিসপ্লেতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়াও রয়েছে কন্ট্রোল বক্স। এ বক্সটিতে সময় সেটাপ করা হবে। এদিকে বাংলামোটর ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সিগন্যালটি প্রশিক্ষণমূলক চালু করা হয়েছে বলে জানা যায়।
সম্প্রতি ডিটিসিএ ভবনে একটি সভা হয়। সভায় উপস্থিত এ প্রকল্পের পরামর্শক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, হাই কোর্ট থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ২২টি ইন্টারসেকশনে ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৪টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮টি স্থাপন করবে। এগুলোর মনিটরিং করবে বুয়েট।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে ট্রাফিক সিগন্যালের বিকল্প নেই। প্রাথমিকভাবে পুলিশ সদস্যদের ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার মাধ্যমে পথচারীদের রাস্তা পারাপারে সহযোগিতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেন, আগস্টের মধ্যে এই সাতটি ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসে বাকিগুলো চালু করা হবে। সে হিসেবে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
গত ২৫ বছরে খরচ ২২১ কোটি টাকা : ২০০০ সালে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে (প্রায় ২৫ কোটি টাকা) ঢাকা শহরে গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত বাতি বসানোর কাজ শুরু হয়। ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় এ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালের দিকে। এক বছর পরে তা নষ্ট হয়ে যায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস)’ নামে আরেকটি প্রকল্প নেয় সিটি করপোরেশন। তখন প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত সরঞ্জাম কেনা হয়। ২০১৫ সালে কাকলী থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত ব্যবস্থা চালু কররেও কিছুদিন পর তা বিকল হয়ে যায়।
২০১৮ সালে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ইন্টারসেকশনের উন্নয়নে ৫২ কোটি টাকা খরচ করে। ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইএসটি) প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে। কিছুদিন পর তা বিকল হয়ে যায়। এরপর ২০১৯ সালে নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ট্রাফিক সিগন্যালের উন্নয়নে ১০০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ইন্টারসেকশনে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। সেটি সচল রাখতে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এ পদ্ধতি কোনো কাজেই আসেনি। এ খাতে ব্যয় হওয়া অর্থ পুরোটা অপচয় হয়েছে।