গত বছরের ১৯ জুলাই রংপুরে রচিত হয়েছিল রক্তাক্ত অধ্যায়। সেদিন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় সাধারণ মানুষ। ভয়াল দিনগুলোর কথা স্মরণ হলে শিউরে ওঠেন নিহতদের স্বজনসহ পুরো রংপুরবাসী। রংপুর নগরীর সিটি বাজারের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হন অনেকেই। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত রংপুরে ৪১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলা ঢাকায় ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর গতি নেই। নিহত স্বজনদের দাবি, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে অপরাধীদের বিচার করা হোক।
সেদিন ছিল শুক্রবার। সিটি বাজার এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে পাঁচজন নিহত হন। তারা সবাই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। কেউ অটোচালক, কেউ কলা বিক্রেতা, কেউ শ্রমিক।
নিহতরা হলেন- রংপুর নগরীর কামালকাছনা এলাকার বাবু মিয়ার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (৩০), নগরীর নিউ জুম্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত ছামছুল ইসলামের ছেলে মিরাজুল ইসলাম, নগরীর গণেশপুর বকুলতলা এলাকার মৃত মন্টু মিয়ার ছেলে মোসলেম উদ্দিন মিলন (৪০), শালবন এলকার আবদুল্লাহিল আল তাহির। এর আগের দিন নগরীর পূর্ব ঘাঘটপাড়া এলাকার সেকেন্দার মিয়ার ছেলে অটোচালক মানিক মিয়া (৩৫) পুলিশের গুলিতে নিহত হন। নিহতরা অতি সাধারণ মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই ঢাকার গ্রিন রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন তরুণ আলোকচিত্রী তাহির জামান প্রিয়। নগরীর ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন তার বাড়ি। বাবা জামান পপি ব্যবসায়ী। এ ছাড়া রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীর হরিদেবপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর চওড়াপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল হাদির ছেলে ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলাম পল্টু মারা যান। ১৯ জুলাই ঢাকার বাড্ডা এলাকায় অসুস্থ কন্যার জন্য ওষুধ কিনতে বের হলে গুলিবিদ্ধ হন। এর দুই দিন পর ২১ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
১৭ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ স্মরণ অনুষ্ঠানে রংপুরের ২২ শহীদ পরিবারকে অতিথি হিসেবে ডাকা হয়। এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন। বিচার দীর্ঘায়িত হলে ন্যায়বিচার থেকে তারা বঞ্চিত হতে পারেন এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেন।
শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র বাবা জামান পপি বলেন, দেশের জন্য তার ছেলে জীবন দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি। তিনি তার ছেলে হত্যার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার দাবি জানান।