চট্টগ্রামে বাড়ছে খুন ও নারীর ওপর সহিংসতা। একের পর এক খুন হচ্ছেন নারী ও পুরুষ। গত ৩৮ দিনে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় খুন হয়েছেন ৩০ জন, এর মধ্যে ১২ জন নারী। খুনের এসব ঘটনার বেশির ভাগেরই নেপথ্য কারণ ছিল পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহসহ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ। এ ছাড়া ধর্ষণের বাধা দিতে গিয়ে খুন হওয়ার নজিরও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সামাজিক অস্থিরতার কারণে সহিংস হয়ে উঠেছে লোকজন। যার প্রভাবে সহজ টার্গেট হিসেবে ভিকটিম হচ্ছেন নারীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌমিতা পাল বলেন, ‘বর্তমানে সামাজিক অস্থিরতা চলছে। পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আগের চেয়ে এখন অনেকটাই দুর্বল হয়েছে পড়েছে। এসব কারণে কিছু কিছু মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। এমন অস্থির পরিস্থিতিতে নারী সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। তাই নারীরা একের পর এক ভিকটিম হচ্ছেন।’ বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে সমাজে। ফলে লোকজনের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়েছে। আর নারীরা তাদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন।’
চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম আট দিনে সিএমপি এবং জেলার বিভিন্ন থানায় খুন হয়েছেন কমপক্ষে ৩ নারী। গত মার্চ মাসে সিএমপি এবং জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় মোট খুন হয়েছেন ২৭ জন। এর মধ্যে নারী রয়েছেন কমপক্ষে নয়জন। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ, প্রেমঘটিত এবং সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চন্দনাইশের গাছবাড়িয়ায় ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় এক কলেজছাত্রীকে। এ ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিন নিহত ছাত্রীর খালাতো মামা। ৫ এপ্রিল নগরীর বন্দর থানা এলাকায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন চাঁদনী বেগম নামে এক পোশাক শ্রমিক। ৩ এপ্রিল ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর ইউনিয়নে তর্কাতর্কির জের ধরে মা জুলেখা খাতুন এবং ছোট ভাই মো. মাসুমকে কুপিয়া হত্যা করে মো. ইয়াছিন।
২৬ মার্চ রাতে নগরীর বন্দর থানাধীন কলসীদিঘির পাড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জের ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় টুম্পা আকতারকে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্বামী ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই দিন সদরঘাট থানাধীন মাঝিরঘাট এলাকা থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ওই নারীকে খুনের পর লাশ ফেলে দেওয়া হয়। ২২ মার্চ নগরীর ইপিজেড থানা এলাকায় বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় গলা টিপে হত্যা করা হয় পোশাক শ্রমিক জোসনা বেগমকে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কথিত প্রেমিক নয়ন বড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। ৯ মার্চ আনোয়ারা উপজেলায় মেয়ের স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন রশিদা খাতুন নামে এক নারী। ২ মার্চ মিরসরাই এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ। ১ মার্চ মিরসরাইয়ে মেয়ের স্বামীর হাতে খুন হন সবুরা খাতুন নামে এক নারী।