প্রাক্তন স্ত্রী জেবা আমিনা আহমেদের বিরুদ্ধে হামলা ও সম্পত্তি দখলের অভিযোগ করেছেন রিয়েলস্টেট ব্যবসায়ী মোকাররম হোসেন খান। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপিটাল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাররম হোসেন এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, জেবা আমিনা নিজেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সহসভাপতি ও ঝালকাঠি জেলা বিএনপি নেত্রী পরিচয়ে মব সৃষ্টি করে বারিধারায় আমার দুটি ফ্ল্যাট দখলে নেওয়ার জন্য লোকজন নিয়ে হামলা ও লুুটপাট চালান। জেবা আমিনা স্বামী থাকা অবস্থায় তথ্য গোপন করে ২০০৫ সালে আমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এটা ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ। এছাড়া নানা সময়ে তিনি আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ধার নিয়ে তা আর ফেরত দেননি। একপর্যায়ে ২০১৭ সালে আমাদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সম্প্রতি তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। আমার সঙ্গে একের পর এক প্রতারণা করা ছাড়াও আমাকে নানা কায়দায় হয়রানি করছেন ও সহিংসতা চালিয়ে আসছেন। আমি এর প্রতিকার চাই। এ ব্যাপারে তিনি বিএনপির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোকাররম খান জানান, গত ২৭ জুন ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। সেই সুযোগে রাতে আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার বারিধারার ২, ইউ.এন. রোডের তার মালিকানাধীন ভবনের ২০১ ও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটে জেবা আমিনার নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র দল হামলা চালায়। প্রথমে তারা নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহকর্মীদের মারধর করে, ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরা ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর তালা ভেঙে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে গৃহকর্মীদের মারধর ও নারী কর্মীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায়। হামলাকারীরা মূল্যবান হীরার গয়না, স্বর্ণালংকার, রোলেক্স ও ওমেগা ঘড়ি, নগদ অর্থসহ প্রায় ৭৭ লাখ টাকার সম্পদ লুট করে। ঘটনার সময় ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে হামলাকারীদের কাছ থেকে ২০১ ও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি উদ্ধার করে। তবে পরবর্তীকালে পুলিশ ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি ফেরত দিলেও ৪০১ নম্বর ফ্ল্যাটের চাবি এখনো ফেরত দেয়নি। ওই ফ্ল্যাটে তার মেয়ে মাহিরা হোসেন খান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মূল্যবান সামগ্রী রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করেন মোকাররম হোসেন খান। পরে তার মেয়ে মাহিরা হোসেন খান চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি জানান, জেবা আমিনা তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নিজের বলে দাবি করেছেন এবং জাল কাগজপত্র তৈরি করে কোম্পানি কোর্টে মামলা করেছেন। এসব বিষয়ে গুলশান থানায় একাধিক এজাহার দায়ের করা হয়েছে। ফ্ল্যাট সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে ২০২০ সাল থেকে স্থিতাবস্থা জারি আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মোকাররম হোসেন খান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বিএনপির মতো একটি দলের ভাবমূর্তি জেবা আমিনার মতো বিতর্কিত নেত্রীদের কর্মকাণ্ডে কলুষিত হোক, আমরা তা চাই না’।
তিনি অভিযুক্তদের গ্রেফতার, লুট হওয়া সম্পদ উদ্ধার, পুলিশের হেফাজতে থাকা ফ্ল্যাটের চাবি ফেরত, সরকার ও প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি হামলার সিসিটিভি ফুটেজ, স্থিরচিত্র, আদালতের নথি, তালাক ও বিবাহের সনদ, পুলিশের জবানবন্দী ভিডিওসহ একাধিক প্রমাণ উপস্থাপন করেন।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ