জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পূরক বৃত্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশ ও ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু সহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ পাঁচ দফা দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গনতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ লিখিত বক্তব্যে বলেন, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি। ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মূল সংগঠন আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ ও মুখ্যসংগঠক ফেরদৌস শেখ অনশনের ডাক দেই। ওই অনশনে একাত্মতা প্রকাশ করে অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও অংশগ্রহণ করে।
একই দাবিতে বৈষম্যের শিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ১৪ মে 'লং মার্চ টু যমুনা কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের বর্বরোচিত হামলার শিকার হন। পরবর্তীতে যমুনার সামনে টানা তিনদিন অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের আশ্বাসে ৭ একর জমিতে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সম্পূরক বৃত্তি অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি পেয়ে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছে। সম্প্রতি আমরা জানতে পারি সম্পূরক বৃত্তি বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি এবং ইউজিসি এখনো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূরক বৃত্তির অর্থ সংগ্রহ করতে পারেনি।
বাগছাসের মুখ্য সংগঠক বলেন, কেরানীগঞ্জে ৭ একরের অস্থায়ী আবাসন প্রকল্পে এখনো মাটি ভরাট শেষ হয়নি। সেই সঙ্গে আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসেরও দৃশ্যমান কোনো কাজ সেনাবাহিনী শুরু করেনি। ৫ আগস্টের পর আমরা তিনবার এবং অন্যান্য ছাত্রসংগঠন মিলে অন্তত বিশবারেরও বেশি জকসু নির্বাচনের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। বারবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি কিন্তু দুঃখজনকভাবে একটি সংবিধি প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে তুলতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক বছরের বেশি সময় নিয়েছে।
বাগছাসের মুখ্য সংগঠক আরও বলেন, ইউজিসিতে জমা দেওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সিন্ডিকেট অনুমোদনের ২০ দিন পার হলেও ইউজিসি থেকে এখনো মন্ত্রণালয়ে সংবিধি প্রেরণ করা হয়নি। আমরা পূর্বেই বলেছিলাম-সংবিধি অনুমোদনের আগেই ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কাজ সম্পন্ন করা উচিত কিন্তু প্রশাসন তা না করে আবার প্রহসন শুরু করেছে। কালক্ষেপণ করে জাতীয় নির্বাচন ও জকসু নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে একটি পক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঁচ দাবি ঘোষণা করেন জবি শাখা বাগছাসের আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ। পাঁচ দাবি হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের সাথে সমন্বয় করে সম্পূরক বৃত্তি বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিক কবে থেকে শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেতে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রক্তের সাথে বেইমানি করবেন না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্পষ্ট জানাচ্ছি- আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের আমলারা বারবার শিক্ষার্থীদের বিষযে অসহযোগিতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ ও ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করতে হবে, যাতে সংবিধি অনুমোদনের পর আর কোনো অজুহাত না থাকে এবং অবশ্যই সংবিধি অনুমোদনের ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
৩. ইউজিসি ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আহ্বান জানাচ্ছি-আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জকসুর সংবিধি অনুমোদন করুন। ছাত্রসংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক কোনো বৈষম্য আমরা মেনে নিবো না। ডাকসু, জাকসু, রাকসু, চকসুর ইলেকশন হলে জকসু ইলেকশনও হতে হবে।
৪. দ্বিতীয় ক্যাম্পাস ও ড. হাবিবুর রহমান-বাণী ভবন হলের কাজের অগ্রগতি দ্রুত দৃশ্যমান করতে হবে।
৫. ৭ একরে চলমান অস্থায়ী আবাসন প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত