হামজাদের মতো তারকারা বাংলাদেশে খেলায় ফুটবল জেগে উঠেছে দারুণভাবে। গ্যালারিভরা দর্শকেরও সমাগম দেখা যাচ্ছে। তারপরও হামজাদের আড়ালে রেখেই প্রশংসায় ভাসছে নারী জাতীয় দল। ইতিহাস আফঈদা, ঋতুপর্ণাদের পিছু ছাড়ছে না। যা পুরুষ জাতীয় দল পারেনি। তা করে দেখিয়েছেন মেয়েরা। টানা দুবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশকে নিয়ে গেছেন অন্যান্য উচ্চতায়। এখানেই থেমে থাকেননি তারা। প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা পাওয়ায় যত আলোচনা এখন নারী ফুটবলারদের ঘিরে। মিয়ানমারে যেন ঋতু, তহুরা ম্যাজিক প্রদর্শন করেছেন। দুর্দান্ত খেলে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন মেয়েরা। দারুণ শক্তিশালী মিয়ানমারকে হারানোটা যেখানে স্বপ্ন ছিল। তাদেরই মাটিতে হারিয়ে স্বপ্নের এশিয়ান কাপে খেলবে বাংলাদেশ। শুধু কি তাই, তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ১৬ গোল আর হজম করেছে ১ গোল। বাহরাইন ৭, মিয়ানমার ২ ও তুর্কমেনিস্তানকে ৭ গোল দিয়েছেন আফঈদারা।
পুরুষ দল যেখানে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও গোল পাচ্ছে না। সেখানে নারীদের এমন গোল উৎসব দেখে জাতি গর্বিত। যাওয়ার সময়ে হেড কোচ পিটার বাটলার ও অধিনায়ক আফঈদা বলে যান, আশা রাখি হাসিমুখে দেশে ফিরব। কথা রেখেছেন তারা। হাসিমুখে দেশে ফিরেছেন। তাও আবার ইতিহাস গড়ে। রবিবার রাতে দেশে ফিরেছেন স্বপ্নজয়ী নারীরা। মধ্য রাত ৩টায় ইতিহাস গড়া মেয়েদের সংবর্ধনা জানায় বাফুফে।
এর আগেও নারী দলকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছিল। এবার ছিল পুরোপুরি ব্যতিক্রমী আয়োজন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর নারী ফুটবলারদের নিয়ে যাওয়া হয় হাতিরঝিলে। সেখানেই দেওয়া হয় সংবর্ধনা। যতই রাত হোক ইতিহাস গড়া মেয়েদের এক নজর দেখতে হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ফুটবলার দেখামাত্রই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে ঋতুপর্ণাকে দেখার পর সে কি উচ্ছ্বাস। সাফ জিতে যেমন সাবিনা খাতুনকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল। এবার ঋতুপর্ণার দিকেই ছিল চোখ। তারই দুর্দান্ত জোড়া গোলে মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান কাপ নিশ্চিত কওে বাংলাদেশ।
ঋতুপর্ণা ভালোবাসা পেয়ে আনন্দে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। বললেন, ‘এখানে কারও একক নৈপুণ্য নয়। টিম স্পিরিট আমাদের গ্রুপসেরা হতে সহায়তা করেছে। মিয়ানমার আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দল ছিল। তাই অনেকে হয়তো ভেবেছিলেন আমরা পারব না। আমরা জানতাম, সেরা খেললেই অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করা যাবে। আমরা তা পেরেছি এবং দেশের মান রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সাফল্য আচমকা নয়। এটা একটা টিম ওয়ার্ক। ফুটবল কোনো ব্যক্তিগত খেলা নয়। সেইভাবে আমরা নিজেদের প্রস্তুত করেছি। অবশ্য এখানে মূল ভূমিকা রাখছেন কোচরা। তাদের নির্দেশনা মেনেই সেরাটা দিতে পেরেছি।’
ঋতু আরও বলেন, ‘এখানেই আমরা থেমে থাকতে চায় না। যেতে চাই বহুদূর। এশিয়ান কাপ চূড়ান্ত পর্বে ভালো খেললেই ২০২৭ সালে বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব। কাজটা কঠিন, তারপরও চেষ্টা তো করতে হবে। আমার বিশ্বাস, মেয়েরা আর বন্ধ দুয়ারে থাকবে না। স্বপ্নের বিশ্বকাপে জায়গা পেতে লড়াই করবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন অন্যদের সহযোগিতা। কীভাবে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয় তা মেয়েরা জানে।’ ঋতুপর্ণা কতটা পেশাদার তার প্রমাণ দিয়েছেন। মধ্য রাতে সংবর্ধনা শেষে তিনি ও মনিকা চাকমা ভুটানে উড়ে গেছেন। সেখানে তারা স্থানীয় নারী লিগে খেলছেন। মধ্য রাতে সংবর্ধনা হলেও কেউ বিরক্ত প্রকাশ করেননি। অবশ্য যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গতকাল নারী ফুটবলারদের জন্য ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোণনা করেছেন। প্রতিবেশী ভারতের মেয়েরা এশিয়ান কাপে জায়গা পাওয়ায় ৫০ হাজার ডলারের অর্থ পুরস্কার পাচ্ছেন। সেখানে বাফুফে নীরব কেন?