লিওনেল মেসি ফ্রি কিক নিতে এলেন। ডি বক্সের কয়েক গজ বাইরে গোল পোস্টের মাঝ বরাবর। পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোর ডিফেন্ডাররা মানব দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে আছেন। গোলরক্ষক ক্লাওডিও রামোসও প্রস্তুত। আটলান্টার মার্সিডিজ বেঞ্জ স্টেডিয়ামের দর্শকদের মধ্যে নীরবতা। কী হবে! লিওনেল মেসি আরও একবার ম্যাজিক্যাল ফুটবলে মুগ্ধ করে দিলেন সবাইকে। বাম পায়ের শটে জাল খুঁজে নিলেন সবচেয়ে কঠিন দিক দিয়ে। দুজন ডিফেন্ডারের শরীর ঘেঁষে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে গেল। ২০ গজ দূর থেকে মেসি যেন পেনাল্টি শটই নিলেন! মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ল পুরো মার্সিডিস বেঞ্জ স্টেডিয়াম। সেই সঙ্গে দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী। লিওনেল মেসির এক জাদুকরী মুহূর্তেই কয়েকটা ইতিহাস গড়ে মাঠ ছাড়ল ইন্টার মায়ামি।
ক্লাব ফুটবলে ইউরোপিয়ানদের একক আধিপত্য সারা বিশ্বই মেনে নিয়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি, ইন্টার মিলান, বার্সেলোনার মতো ক্লাবগুলোর সঙ্গে কারাই বা লড়াই করে টিকতে পারে! কিন্তু ইউরোপিয়ানদের একক আধিপত্য বুঝি এবার শেষ হতে চলল! চলমান ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে আল হিলাল যেমন আটকে দিল রিয়াল মাদ্রিদকে। এবার লিওনেল মেসিদের ইন্টার মায়ামি হারিয়ে দিল পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোকে। ২-১ গোলের এ জয়ে ইন্টার মায়ামি দারুণ কিছু রেকর্ড গড়ল। কনকাকাফ অঞ্চলের প্রথম ক্লাব হিসেবে প্রতিযোগিতামূলক লড়াইয়ে কোনো ইউরোপিয়ান ক্লাবকে পরাজিত করার গৌরব অর্জন করেছে ইন্টার মায়ামি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ক্লাব হিসেবে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও গড়ল দলটি।
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে পোর্তো বেশ শক্তিশালী দল। র্যাঙ্কিংয়ে তারা ১৮ নম্বরে অবস্থান করছে। এমনকি এসি মিলান আর জুভেন্টাসের মতো ক্লাবগুলোকেও পেছনে ফেলেছে। এই দলটাকে হারিয়ে ইন্টার মায়ামি ক্লাব বিশ্বকাপে অন্যতম ফেবারিট হিসেবেও প্রমাণ করল নিজেদের। অবশ্য জয়টা এলো কঠিন লড়াইয়ের পর। ম্যাচের অষ্টম মিনিটে ভিএআর দেখে পোর্তোকে পেনাল্টি দেন রেফারি। সামু আগহুয়া পেনাল্টি থেকে গোল করে পোর্তোকে এগিয়ে দেন। পিছিয়ে পড়লেও কোচ হাভিয়ের মাসচেরানো ছিলেন নিশ্চিন্ত। কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে বেশি দেরি করেননি মেসিরা। দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে টেলাসকোর গোলে সমতায় ফেরে ইন্টার মায়ামি। এরপরই মেসির সেই ম্যাজিক্যাল ফ্রি কিক গোল। ক্যারিয়ারে ৬৮তম ফ্রি কিক গোল করলেন আর্জেন্টাইন তারকা। ফ্রি কিক গোলের তালিকায় মেসির ওপরে আছেন কেবল জুনিনহো (৭৭) এবং পেলে (৭০)। আরও একটা রেকর্ড ভাঙার খুব কাছে চলে এসেছেন তিনি। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর (৭টি)। মেসির গোল সংখ্যা ৬টি। এই রেকর্ডটাও কি নিজের করে নিবেন তিনি!
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে আল আহলির সঙ্গে ড্র করে ভক্তদের হতাশ করেছিল ইন্টার মায়ামি। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই পোর্তোকে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে নকআউট পর্বে অনেকটা এগিয়ে গেল দলটি। পরের ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরার সঙ্গে ড্র করলেই গ্রুপ পর্বের বাধা অতিক্রম করবে ইন্টার মায়ামি।