রাওয়ালপিন্ডির নুর খান এয়ারবেজ থেকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর স্পেশাল বিমানটি যখন যাত্রা করে, বিমানের সিটে নাহিদ রানা তখন চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। রিশাদ হোসেন তার পাশে বসে আছেন চুপ করে। দুজনের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে চিন্তার বলিরেখা। দাঁড়িয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার, নিউজিল্যান্ডের কাইলি জেমিসন, ইংল্যান্ডের টম কুরানসহ আরও কয়েকজন ক্রিকেটার। স্যাম বিলিংস, টিম ওয়াইজসহ অন্যরা বসে আছেন। বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানটি পিএসএলে খেলতে আসা ৪২ বিদেশি ক্রিকেটার, তাদের স্ত্রী, আম্পায়ারদের নিয়ে মৃত্যুভয়কে জয় করে বিমানবন্দর থেকে আকাশে উড়তেই আনন্দে সবাই হাততালি দিয়ে ওঠেন। মৃত্যুভয়কে জয় করার কারণ, বিমানযাত্রার ২০ মিনিট পর রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা চালায় ভারত। দুই ঘণ্টার যাত্রা শেষে রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বিমানটি। অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন নতুন জীবন পাওয়ার উচ্ছ্বাসে। দুবাই পৌঁছানোর পর বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটাররা নিজ নিজ দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন। রাতে দুবাই থেকে রওনা দিয়ে সকালে ঢাকায় পা রাখেন দুই ক্রিকেটার নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেন। পাকিস্তান ছেড়ে দুবাই পৌঁছানোর পর মিডিয়ায় টাইগার লেগ স্পিনার রিশাদ বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সব ধরনের ক্রাইসিস অতিক্রম করে আমরা দুবাই পৌঁছেছি। এখন ভালো লাগছে, ভালো আছি।’
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড জনপ্রিয় টি-২০ ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আইপিএল ও পিএসএল স্থগিত করে। অবশিষ্ট ৮ খেলা আয়োজনে পিএসএলকে দুবাইয়ে স্থানান্তরিত করে পিসিবি। দু-তিন দিনের মধ্যে নতুন করে শিডিউল ঘোষণার চিন্তাভাবনা করেছিল পিসিবি। কিন্তু ক্রিকেটারদের রাওয়ালপিন্ডি ছাড়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে ড্রোন হামলার পর পিসিবি স্থায়ীভাবে পিএসএল স্থগিত করে। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরুর পর পিএসএল খেলতে আসা বিদেশি ক্রিকেটাররা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন। শুধু তাই নয়, সব বিদেশি ক্রিকেটার জোটবদ্ধ হয়ে দেখা করেন পিসিবি সভাপতি নাকভির সঙ্গে। সবাই দেশে ফেরার জন্য ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন পিসিবি সভাপতিকে। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদও প্রতিদিন যোগাযোগ রাখতেন টাইগার দুই ক্রিকেটার ও টুর্নামেন্ট কাভার করতে যাওয়া ক্রিকেট সাংবাদিকের সঙ্গে। বিসিবি সভাপতি নিয়মিত যোগাযোগ করেছেন পিসিবি সভাপতি ও পিএসএল সিইওর সঙ্গে। ক্রিকেটারদের নিরাপত্তাকে বরাবরই প্রাধান্য দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। যুদ্ধ শুরুর পরও পিএসএল চলছিল। কিন্তু আক্রমণ, প্রতি আক্রমণে অবশেষে পিএসএল স্থায়ীভাবে স্থগিত করে পিসিবি। বিদেশি ক্রিকেটারদের শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে কার্পণ্য করেনি। পিসিবি দেশটির বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমানে দুবাই পৌঁছে দেয় ক্রিকেটারদের। দুবাই পৌঁছার পর রিশাদ বাংলাদেশের দুই মিডিয়াকর্মীকে আরও বলেন, ‘দুবাই পৌঁছেই আমরা শুনেছি, আমাদের বিমান ছাড়ার ২০ মিনিট পর মিসাইল হামলা হয়েছে বিমানবন্দরটিতে। এমন সংবাদে ভীত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা এখন ভালো আছি।’ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরুর পর দেশবাসীর সঙ্গে ক্রিকেটারদের পরিবারও শঙ্কিত ছিল। রিশাদ আরও বলেন, ‘পাকিস্তান থাকাকালীন আমি সবসময়ই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। সবকিছু জানানোর পর পরিবার স্বাভাবিক হয়েছে।’ পরিস্থিতি নিয়ে নাহিদ কতটা চিন্তিত ছিলেন, সে প্রসঙ্গে রিশাদ বলেন, ‘নাহিদ খুবই চুপচাপ ছিল। আমার মনে হয়েছে, এমনটা করেছে টেনশন থেকে।’ বিদেশি ক্রিকেটারদের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘টম কুরান একবার বিমানবন্দরে গিয়ে দেখেন বিমান চলাচল বন্ধ। এরপর হোটেলে ফিরে শিশুর মতো কান্নাকাটি করতে থাকেন। ড্যালে মিচেল বলেছেন, তিনি জীবনে আর কখনই পাকিস্তানে যাবেন না।’ লেগ স্পিনার রিশাদ পিএসএলে খেলেছেন লাহোর কালান্দার্সের পক্ষে এবং ‘স্পিডস্টার’ নাহিদের দল ছিল পেশোয়ার জালমি। করাচি কিংসের পক্ষে খেলতে পাকিস্তান গেলেও ইনজুরিতে পড়ে দেশে ফেরেন আসেন লিটন দাস। পেশোয়ারে নাম লেখালেও অভিষেক হয়নি নাহিদের। রিশাদ ৫ ম্যাচ খেলে উইকেট নেন ৯টি।