বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সর্বস্তরের জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, সতর্ক থাকুন। কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে।
গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভার্চুয়ালি বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।
বিএনপির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বিজন কান্তি সরকার, কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া, মৈত্রী দেওয়ান, সমীর দেওয়ান, প্রবীণ চাকমা, অনিমেষ চাকমা, অ্যাডভোকেট নিকোলা চাকমা, প্রার্থ প্রীতম বড়ুয়া, চন্দ্রা চাকমা, মানস থু চাকমা, লু থু মু মারমা প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুভাষ চন্দ্র চাকমা। লন্ডন বিএনপির সভাপতি আবদুল মালেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পরে আগত অতিথি বৌদ্ধ সম্প্র্রদায়ের সদস্যদের মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। গণতান্ত্রিক বিশ্বে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে গণতন্ত্রবিরোধীরা গণতন্ত্রের অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিগত দেড় দশক ধরে যারা অথবা যে দলটি ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ চালিয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে তারা অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমানে দুটি বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে একমত। তা হলো বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এবং গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এই দুটি বিষয়ে জনগণ আর কোনো আপস করতে রাজি নয়।
তারেক রহমান বলেন, জনগণ পতিতদের পুনর্বাসন চায় না। বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- যারা সংবিধান বারবার লঙ্ঘন করেছেন দেশে অবৈধ সংসদ এবং সরকার গঠন করেছেন, যারা সংবিধান লঙ্ঘনে জড়িত ছিলেন- তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের জনগণ, সরকার এবং রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম-খুন-অপহরণ, দুর্নীতি, লুটপাট, টাকা পাচার, বর্বর আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না এই বাংলাদেশের মানুষ।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, বিএনপি এই অন্তবর্তী সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে এখানে একটি কথা রয়ে গেছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণের সামনে যাতে স্বচ্ছ ধারণা থাকে, সে কারণে বিএনপি প্রথম থেকেই এই সরকারের কাছে তাদের একটি কর্মপরিকল্পনা-পথনকশা ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে এসেছে এবং আসছে। সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা যদি জনমনে থাকে তাহলে কোনো রকমের সংশয়-সন্দেহ কিংবা বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থাকে না।
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের দুঃশাসন ও দুষ্কর্মগুলোর চিত্র এবং জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলি বেশি করে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে কক্সবাজারের রামু, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর-উপাসনালয় ঘটনাবলি নিয়েও গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না। আগামী দিনে বিএনপি জনগণের রায়ে ইনশা আল্লাহ রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর, অনাহুত ঘটনা ঘটেছে- তার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ের একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় ‘নাগরিক তদন্ত কমিশন’ গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমরা সবাই বাংলাদেশি। দলমত ধর্ম নির্বিশেষে দেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান গর্বিত পরিচয় হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশি। নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রেখেই বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র ও সমাজের সমান এবং ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে এটি বিএনপির নীতি।