সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের ভিতরে ও বাইরে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। তাকে বিদেশ পালাতে সহায়তাকারী হিসেবে একজন আরেকজনের দিকে তির ছুড়ছে। জুলাই গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে একজন এসপি ও একজন অতিরিক্ত এসপিকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া এসআই ও এএসআই পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে স্বৈরাচারী সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মতিউর রহমান শেখকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত বুধবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছাড়েন।
গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শনে শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় এরই মধ্যে কয়েকজনকে সাসপেন্ড করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাবেক রাষ্ট্রপতির বিদেশযাত্রায় স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) নিষেধাজ্ঞা ছিল কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে এ মুহূর্তে সে তথ্য নেই। তবে আপনারা যেহেতু বললেন, আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। তদন্ত কমিটি পুরো বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখছে। কেউ দোষী হলে সে শাস্তি পাবেই। গণ অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। এটার জন্য প্রক্রিয়া সব সময় জারি রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদন করা আছে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইন্টারপোল প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারপোল তো আমার কথা অনুযায়ী কাজ করবে না। এ ক্ষেত্রে তারা (ইন্টারপোল) তাদের আইনকানুন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। হঠাৎ বিমানবন্দর পরিদর্শনের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমি ২০১১ সালের পর বিদেশে যাইনি তাই সিস্টেমটা জানার জন্য এসেছিলাম, কীভাবে ইমিগ্রেশন হয় সেসব দেখার জন্য। আমি দেখলাম আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলন ব্লকেড কর্মসূচি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাধারণ মানুষের যেন ভোগান্তি না হয় সে ব্যাপারে আপনারাও (সাংবাদিকরা) সচেতন করতে ভূমিকা পালন করতে পারেন। সবার দাবিদাওয়ার আন্দোলনগুলো যদি রাস্তা ছেড়ে এমন একটি জায়গায় করা হয় যেখানে ভোগান্তি হবে না তাহলে সেটা খুব ভালো হয়। দাবিগুলোকে আমি অযৌক্তিক বলব না। তারা শুরুতে আন্দোলন যেখানে শুরু করেছিল সেখান থেকে শিফট করে অন্য জায়গায় গেছে। এরপরও জরুরি পরিবহনগুলোকে তারা যাতায়াত করতে দিচ্ছে। আন্দোলনকারীদের প্রতি সড়ক ছেড়ে ‘সঠিক জায়গায়’ দাবিদাওয়া তোলার আহ্বান জানাই।