বাংলাদেশের ফুটবলে বাঁকবদলের গল্প লিখছেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে যোগ হতে যাচ্ছেন আরও অনেকে। এঁদের মধ্যে ইতালিয়ান ফুটবলে খেলা ফাহমিদুল এবং কানাডা লিগে খেলা সামিত সোমের নামই উচ্চারিত হচ্ছে বেশি করে। ফাহমিদুলকে আগামী ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেই দেখা যেতে পারে। সামিত সোমের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে তিনিও শিগগিরই লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়াতে যাচ্ছেন। গত মাসে শিলংয়ের নেহরু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে লাল-সবুজের জার্সিতে খেলে চমকে দিয়েছেন হামজা। দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন তিনি। এবার বাংলাদেশের মাটিতেও দেখা যাবে সেই চমক।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ ১০ জুন। এটা আগেই ঠিক করা ছিল। তবে ম্যাচটি কোথায় হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা হয়েছে অনেক। জোর গুঞ্জন ছিল, ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি। গতকাল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কম্পিটিশনস কমিটি এক সভার পর জানিয়েছে, ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামেই হবে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের নিয়ে বাফুফের কম্পিটিশনস কমিটির সদস্যরা স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন।
কম্পিটিশন কমিটির চেয়ারম্যান, বাফুফে নির্বাহী সদস্য ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার গোলাম গাউস। গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন কমিটির সদস্য ও আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল। তিনি বলেন, ‘আমরা সমর্থকদের মাঠে ফেরাতে চাই। সমর্থকরা যেন মাঠে এসে খেলা দেখতে পারেন, এজন্য আজ স্টেডিয়ামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও আমাদের সহায়তা করছে।’ গণমাধ্যমে ব্রিফ করার পর ফেডারেশন ও এনএসসি কর্মকর্তারা গ্যালারি ও মাঠ পরিদর্শন করেন। ফুটবলে আধুনিক স্টেডিয়ামে সমর্থকদের জন্য ফুড জোন, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটসহ অন্যান্য সুবিধা থাকে।
দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলা নেই। সংস্কারের জন্য এই মাঠে ২০২১ সাল থেকেই খেলা বন্ধ। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা করা যায়নি। দীর্ঘদিন পর এই স্টেডিয়ামে খেলা হচ্ছে। অবশ্য ১০ জুনের আগে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ৫ জুন সেই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ এখনো ঠিক হয়নি। প্রতিপক্ষ ঠিক না হলেও খেলাটি জাতীয় স্টেডিয়ামেই হবে সেটা নিশ্চিত। সুদান, ভুটান কিংবা সাইবেরিয়া হতে পারে প্রতিপক্ষ।
অবশ্য ১০ জুন বাছাইপর্বের ম্যাচ আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা এখনো কিছুটা বাকি রয়েছে। এএফসি নিয়ম অনুযায়ী এক মাস আগেই ভেন্যুর নাম জানাতে হয়। বাফুফে ইতোমধ্যে জাতীয় স্টেডিয়ামের নাম এএফসিতে পাঠিয়েছে। স্টেডিয়াম সংস্কারের পর এএফসির পুনরায় অনুমোদন প্রয়োজন। সম্প্রতি এএফসি ম্যাচ কমিশনার এসেছিলেন। ২২ মে’র মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বাফুফে আশাবাদী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সবকিছু সম্পন্ন হবে।
এদিকে হামজা-ফাহমিদুলদের ম্যাচ দেখার জন্য টিকিট অনলাইনেই পেতে যাচ্ছেন ফুটবল সমর্থকরা। বিপিএলের টিকিট গত আসরে অনলাইনেই ছেড়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সেই পথে হাঁটতে যাচ্ছে বাফুফেও। তাজওয়ার আউয়াল বলেন, ‘আমরা অনলাইনে টিকিট বিক্রি করব। টিকিটের দাম কত হবে সেটা মার্কেটিং কমিটি ও ফেডারেশনের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত হবে পরবর্তী সময়ে ফেডারেশনই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে।’ টিকিটের দাম সুনির্দিষ্ট না হলেও আসনবিন্যাস ও দাম নিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্যালারির (সাধারণ) জন্য আমরা ১৮ হাজার ৩০০ টিকিট বিক্রি করব। এ ছাড়া অন্য ক্যাটাগরি থাকবে। কোন ক্যাটাগরির টিকিট কত সেটা সব বিবেচনা করেই করা হবে। সমর্থকরা যেন খেলা দেখতে আসতে পারেন এবং টিকিটের মাধ্যমে বাফুফের আয়ও হয়, দুই দিকই বিবেচনা করা হবে।’
ঢাকা স্টেডিয়ামের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। এই মাঠে কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী তাঁর জাদু দেখিয়েছেন। এই মাঠে খেলেছেন লিওনেল মেসিরা। জিনেদিন জিদানকে বল নিয়ে খেলতে দেখেছেন দর্শকরা। এবার নতুন করে সাজিয়ে তোলা ঢাকা স্টেডিয়াম মাতাবেন হামজা-ফাহমিদুলরা।