ইস্ট রাদারফোর্ডের মেটলাইফ স্টেডিয়াম এলাকা খুব পরিচিত না হলে এখানে পথ হারানো খুবই স্বাভাবিক। চারদিকে এত এত রাস্তা, কোনটা রেখে কোনটা ধরব বলা কঠিন। এমনকি গুগলের মানচিত্র দেখেও ঠাহর করা যায় না। একটু ডান-বাম হলেই ফের উল্টো পথ ধরতে হয়। স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স বিরাট এলাকা নিয়ে। এর সঙ্গে যুক্ত মিডোল্যান্ড স্পোর্টস কমপ্লেক্সও। সেখানে আমেরিকান ফুটবল খেলার পাশাপাশি হর্স রেসিংয়ের (ঘোড় দৌড়) ব্যবস্থাও আছে। এ বিশাল কমপ্লেক্সের পাশেই আমেরিকান ড্রিম নামের শপিংমল। যেখানে নানা ধরনের ব্র্যান্ডের শো-রুমের পাশাপাশি আছে বিনোদনের এক বিশাল জগত। এক ছাদের তলাতেই মেলে ওয়াটার পার্ক, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, থিয়েটার, গেমিং জোনসহ আরও কত কী! এর ভিতরেই বাচ্চারা দিনমান আইস হকি খেলতে থাকে। স্কুল থেকে দল বেঁধে চলে আসে তারা এই খেলার জগতে।
আমেরিকার মেটলাইফ স্টেডিয়াম ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ আয়োজন করবে। এখানে আগামী বছর বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালও অনুষ্ঠিত হবে। ১.৬ বিলিয়ন ডলার খরচায় তৈরি করা স্টেডিয়ামটি দূর থেকেই চকচক করে। স্টেডিয়ামের বাইরের দিকটা ডিজাইন করা স্টিল দিয়ে মোড়ানো। দেখলে মনে হয় বিরাট কোনো পাখির বাসা। স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সেই বিশাল এলাকাজুড়ে আছে পার্কিং। সেখানে নিরাপত্তাকর্মীরা নানা রকমের ব্লক তৈরি করছেন। রাস্তাতেও চলছে ডাইভারশন তৈরির কাজ। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার বেশি দেরি নেই। বাংলাদেশ সময় ১৫ জুন ভোরে আল আহলি-ইন্টার মায়ামি ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে এ বিশ্বকাপ। মেটলাইফ স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ ১৬ জুন ভোরে (বাংলাদেশ সময়)। ক্লাব ফুটবলে সবচেয়ে বড় আয়োজন করতে যাচ্ছে ফিফা। কিন্তু আমেরিকানদের এ টুর্নামেন্ট নিয়ে খুব কমই আগ্রহ আছে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক-নিউজার্সিতে। এমিরেটসের জাম্বো ফ্লাইটে এক আমেরিকানের সঙ্গে দেখা। নাম এলটো। অদ্ভুত নাম। তার সঙ্গে ফুটবল নিয়ে আলাপ করতে গিয়েই বিপত্তি ঘটল। আমেরিকায় ফুটবল তো আর ফুটবল নয়। এখানে সকার। ক্লাব বিশ্বকাপের কোনো খবরই নেই এলটোর। তবে অল্প বয়সিদের মধ্যে আবার ভিন্ন প্রতিক্রিয়া। ১৪ বছরের ক্লাস নাইন পড়ুয়া হাদীর সঙ্গে আলাপ হতেই গড়গড় করে ক্লাব বিশ্বকাপের সব তথ্য দিয়ে দিল। বয়সের পার্থক্য অনেক কিছুই বদলে দেয়। চিন্তার জগতে থাকে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। নিউইয়র্ক-নিউজার্সির অল্প বয়সিদের মধ্যে উন্মাদনার বড় কারণ, এ টুর্নামেন্টে আছে রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানসিটি, পিএসজি, জুভেন্টাসের মতো বড় বড় ক্লাবগুলো। লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামিও তো আছে! কিন্তু বাচ্চাদের মধ্যকার এ উন্মাদনা বড়দের স্পর্শ করে না অতটা। ফুটবল নিয়ে তাদের খবর রাখার সময় কোথায়! ব্যস্ততার ভিড়ে বিনোদনের অনেক কিছুই হারিয়ে যায় জীবন থেকে।
বেসবল আমেরিকানদের খুব প্রিয়। এ দেশের অনেক স্কুলেই বেসবলের মাঠ থাকে। সেখানে ছেলেমেয়েরা প্রায়ই খেলা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। তবে এখন সকার নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই। লিওনেল মেসির আগমন, এ দেশেও সকারের (ফুটবল) দাপট বাড়িয়েছে। স্কুলের ছেলেরা আগে বাস্কেটবল আর বেসবল ছাড়া খুব কমই ভাবত। এখন তারাও সকার খেলোয়াড় হতে চায়।
আমেরিকানদের এ আগ্রহ ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে নিউইয়র্ক-নিউজার্সিতে খুব একটা চোখে পড়ল না। অনেকটা নীরবেই চলছে এ টুর্নামেন্টের আয়োজন। প্রথমবারের মতো ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে এত বড় আয়োজন করছে ফিফা। ছয়টি কনফেডারেশন থেকে ৩২টা দল অংশ নিচ্ছে এ টুর্নামেন্টে। এখানে কত বড় বড় ক্লাব আছে। অথচ ভক্তমহলে কেমন যেন সুনসান নীরবতা! অবশ্য নিউজার্সির এক বাসিন্দা জানালেন, ফুটবল নিয়ে আমেরিকায় ল্যাটিনোদের আগ্রহ অনেক। যেসব স্থানে ল্যাটিনো আছে, সেখানে ক্লাব বিশ্বকাপের উত্তাপ অনুভব করা যায়। লিওনেল মেসির মায়ামিতেও নাকি ল্যাটিনোদের অবস্থান অনেক। তবে কি ক্লাব বিশ্বকাপের সব উত্তাপ এখন মায়ামিতে! সেই শহরে এখনো যাওয়া হয়নি।