ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না— এ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘ধ্বংসাত্মক আঘাত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া স্যাটেলাইট চিত্র ও তথ্যের ভিত্তিতে ইরানের মূল পরমাণু স্থাপনাগুলো সীমিত ক্ষতির মুখে পড়েছে।
নিহত হয়েছেন ২০ সামরিক কর্মকর্তা, ৬ বিজ্ঞানী
দুইটি আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, এই হামলায় ইরানের অন্তত ২০ জন সামরিক কমান্ডার নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রাণ হারিয়েছেন ছয়জন শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানী। এই মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক বড় ধরনের ধাক্কা।
পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডারদের নিশানা করে ইসরায়েলের এই আঘাত অনেকটা গত বছরের হিজবুল্লাহ নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন করার মতোই পরিকল্পিত ও মারাত্মক ছিল।
নাতাঞ্জে ক্ষতির আভাস, কিন্তু ভূগর্ভস্থ কেন্দ্র অক্ষত
ইরানের মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। তিনি জানিয়েছেন, সেখানে উপরের দিকের পাইলট প্লান্ট ও বিদ্যুৎব্যবস্থা ধ্বংস হয়েছে, যা কিছু সেন্ট্রিফিউজ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে নাতাঞ্জের মূল ভূগর্ভস্থ স্থাপনাটির বড় ধরনের ক্ষতির প্রমাণ মেলেনি।
পরমাণু বিশেষজ্ঞ ডেভিড আলব্রাইট বলেন, ফোরদো বা ইসফাহানে দৃশ্যমান কোনো ক্ষতির প্রমাণ নেই। তবে নাতাঞ্জে কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে ভূগর্ভস্থ অংশ ধ্বংস হয়েছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
তিনি আরও বলেন, হামলার প্রথম ধাক্কা মূলত ছিল ইরানের নেতৃত্ব ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আঘাত হানা, যাতে প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা ভেঙে পড়ে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা মাথায় রেখেই আংশিক হামলা?
বিশ্লেষকদের ধারণা, ইসরায়েল হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবেই পরমাণু স্থাপনাগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বিরত থেকেছে। কারণ সেখানে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা অবস্থান করছেন। সেইসঙ্গে ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে হামলা করতে গেলে প্রয়োজন হয় অত্যন্ত শক্তিশালী বোমা ও উন্নত বোমারু বিমান— যা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়ই সম্ভব।
আপাতত কম দৃশ্যমান ক্ষতি, তবে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে
ডেভিড আলব্রাইট বলেন, বর্তমানে দৃশ্যমান ক্ষতি সীমিত। তবে সাইবার হামলা ও ড্রোন দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড স্থাপনাগুলোর সুড়ঙ্গ পথেও আঘাত হতে পারে, যার প্রমাণ পরে মিলতে পারে। তিনি আরও বলেন, যদিও এখনও ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদের অবস্থা অজানা, তবে ইসরায়েল হয়তো হামলার শুরুতেই সেটা লক্ষ্য করেনি।
ইরানের পাল্টা জবাব এবং পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা
ইতিমধ্যে ইরান ইসরায়েলের দিকে পাল্টা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। জেরুজালেমে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাতের এখনো পূর্ণ পরিণতি আসেনি। বড় ধরনের পরমাণু ক্ষতি না হলেও, এই হামলা ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে কট্টরপন্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও জটিলতা তৈরি করতে পারে। বিশ্ব এখন দেখছে, এই উত্তেজনা কীভাবে সামাল দেয় তেহরান— প্রতিরোধ নাকি আপস?
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল