স্বপ্ন পূরণ হলো না ‘চোকার্স’খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকার। ২৭ বছরের ব্যর্থতার খোলস ভেঙে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল খেলা হলো না টেম্বা বাভুমার দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রোটিয়াসদের স্বপ্নকে ভেঙেচুড়ে ১৬ বছর পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড। ব্ল্যাক ক্যাপসরা সর্বশেষ ফাইনাল খেলেছিল ২০০৯ সালে। ২০০০ সালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ২৫ বছর পর পুনরায় ভারত ও নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন ট্রফির ফাইনাল খেলবে। নিউজিল্যান্ড তৃতীয়বার ফাইনাল খেলতে গতকাল ৫০ রানে হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। প্রথম সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারিয়ে টানা তৃতীয়বার ফাইনাল খেলছে ভারত। ৯ মার্চ দুবাইয়ে ফাইনাল খেলবে ভারত ও নিউজিল্যান্ড।
ম্যাচসেরা রাচিন রবীন্দ্রের বয়স মাত্র ২৫। ভারতের বেঙ্গালুরুতে জন্ম রাচিন এখন নিউজিল্যান্ডের অভিবাসী। বাঁ-হাতি রাচিন ওপেনার হিসেবে খেলছেন কিউই দলে। তাকে বলা হয় ‘আইসিসি বিগ টুর্নামেন্ট প্লেয়ার’। আইসিসির টুর্নামেন্ট মানেই রাচিনের সেঞ্চুরি। ২০২৩ সালে ভারতের মাটিতে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলে ৩টি সেঞ্চুরি করেন। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনালে গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন। রাচিনের সঙ্গে সেঞ্চুরি করেন কেন উইলিয়ামসন। খেলেন ১০২ রানের ইনিংস। দুজনের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৬২ রান করে নিউজিল্যান্ড। যা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দলগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার। চলতি আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান তাড়া করে ৪৭.৩ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৫৬ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড করেছিল ৮ উইকেটে ৩৫১ রান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মূল মঞ্চে নামার আগে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হয়েছিল তিন জাতির একটি টুর্নামেন্টে। লাহোরের ওই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ৬ উইকেটে ৩০৪ রান টপকেছিল নিউজিল্যান্ড ৮ বল হাতে রেখে। উইলিয়ামসন খেলেছিলেন ১৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। গতকালও সেঞ্চুরি করেন ব্ল্যাক ক্যাপসদের সাবেক অধিনায়ক। খেলেন ৯৪ বলে ১০ চার ও ২ ছক্কায় ১০২ রানের ইনিংস। যা তার ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরি। দলীয় ৪৮ রানে উইল ইয়াংয়ের বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন রাচিন ও উইলিয়ামসন। দুজনে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২৫.৪ ওভারে ১৫৪ বলে যোগ করেন ১৬৪ রান। ইনিংসে ৩৩.৩ ওভারে দলীয় ২১২ রানে সাজঘরে ফেরেন রাচিন। খেলেন ১০১ বলে ১৩ চার ও ১ ছক্কায় ১০৮ রানের ইনিংস। ৩২ ম্যাচ ক্যারিয়ারে এটা তার পঞ্চম সেঞ্চুরি। ইনজুরি কাটিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ফিরেই খেলেন ১১২ রানের ইনিংস। এখন পর্যন্ত রাচিন একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দুই সেঞ্চুরি করেছেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছিলেন ৩টি।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের আগে পর্যন্ত সেঞ্চুরি হয়েছে ১৪টি। যা এক আসরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২০০২ ও ২০১৭ সালে ১০টি করে সেঞ্চুরি হয়েছিল। গতকাল তিন সেঞ্চুরি করেন রাচিন, উইলিয়ামসন ও ডেভিড মিলার। মিলার একাই লড়াই করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে। ৩৬৩ রানের টার্গেটে দক্ষিণ আফ্রিকা সংগ্রহ করে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১২ রান।
টুর্নামেন্টের শুরুতে রান করেননি উইলিয়াসন। দুবাইয়ে ভারত ম্যাচে ৮১ রানের ইনিংস খেলে ছন্দে ফেরেন। গতকাল খেলেন সেঞ্চুরির ইনিংস। রাচিনকে নিয়ে লাহোরে দ্বিতীয় উইকেটে ১৬৪ রানের বড় জুটি গড়েন। রাচিনের বিদায়ের পর উইলিয়ামসন জুটি বাঁধেন ড্যারেল মিচেলের সঙ্গে। কিন্তু বড় কোনো জুটি গড়তে পারেননি দুজনে। দলীয় ৩৯.৫ ওভারে ২৫১ রানে ফেরেন উইলিয়ামসন। ২৫৭ রানে ফেরেন ছন্দে থাকা টম ল্যাথাম। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ড্যারেল মিচেল ও গ্লেন মিচেল ৬৭ রান যোগ করেন ৩০ বলে। দুজনেই ৪৯ রান করেন। মিচেল ৪৯ রান করেন ৪৭ বলে এবং ফিলিপস অপরাজিত থাকেন ৪৯ রানে। রাচিন ও উইলিয়ামসনের জোড়া সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ড সংগ্রহ করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৬২ রান।
টার্গেট আকাশসমান ৩৬৩ রান। ওভারপ্রতি করতে হবে ৭.২৬। ২৭ বছর পর ফাইনাল খেলার স্বপ্নে বিভোর প্রোটিয়াদের উদ্বোধনী জুটি বিচ্ছিন্ন হয় ২০ রানে। এরপর অধিনায়ক বাভুমা ও ভ্যান ডার ডুসেন ১৭.৩ ওভারে ১০৫ রান যোগ করেন। ম্যাচে এটাই দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় জুটি। বাভুমা ৫৬ রান করেন ৭১ বলে এবং ভ্যান ডার ডুসেন ৬৯ রান করেন ৬৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায়। শেষ দিকে একা লড়াই করেন ডেভিড মিলার। বীরের মতো ব্যাটিং করে ১০০ রানে অপরাজিত থাকেন ১০ চার ও ৪ ছক্কায়। ১৭৮ ম্যাচ ক্যারিয়ারে মিলারের এটা ৭ম সেঞ্চুরি। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ ৫ ওভারে ৫৯ রান যোগ করে।