বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারে বেইজিং যে আরও একধাপ এগোল, তা এবার খোলাখুলিই দেখাল চীন। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে দেশটির দুটি ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের পরীক্ষামূলক উড়ানের ভিডিও ও ছবি। এতে দেখা গেছে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিমানগুলো অত্যাধুনিক ডিজাইন ও প্রযুক্তিতে তৈরি।
প্রথম বিমানটির নাম সম্ভাব্য ‘জে-৩৬’, যা ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর চেংডু শহরের আকাশে উড়তে দেখা যায়। এটি তৈরি করেছে চেংডু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন। বিমানের গায়ে নেই কোনও পুচ্ছাংশ (টেইল), বরং এতে আছে বিরল তিন ইঞ্জিনের কাঠামো – যা শক্তিশালী থ্রাস্ট ও পে-লোড বহনের সম্ভাবনা বাড়ালেও জ্বালানির ব্যবহার ও জটিলতা বাড়াতে পারে।
একই দিনে উত্তর চীনের একটি বিমান কারখানার কাছাকাছি দেখা যায় আরও একটি নতুন যুদ্ধবিমান। এটি তৈরি করেছে শেনইয়াং এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন এবং এর সম্ভাব্য নাম ‘জে-৫০’। এতে রয়েছে ভি-আকৃতির ডানা ও দুইটি ইঞ্জিন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের এই দ্রুত এগিয়ে চলা আমেরিকার বিরুদ্ধে একরকম বার্তা। কারণ, সম্প্রতি আমেরিকা বয়িং কোম্পানিকে ‘এনজিএডি’ প্রকল্পে নতুন এফ-৪৭ যুদ্ধবিমান নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছে।
চীনের বিমানগুলো এখনো প্রোটোটাইপ পর্যায়ে আছে। ল্যান্ডিং গিয়ার নিচে নামানো এবং বিমানের গায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র সংযুক্ত থাকায় এটি স্পষ্ট। তবে ২০২২ সালে প্রথম ধারণা প্রকাশের পর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এতটা অগ্রগতি নজর কাড়ার মতো।
চীনের এই নতুন বিমানগুলোতে থাকছে দুটি পাইলটের জায়গা, যাদের একজন হয়তো ড্রোন নিয়ন্ত্রণে থাকবেন। সম্ভাব্য অভিযানে ব্যবহার হতে পারে হাইপারসনিক মিসাইল, যার লক্ষ্য হতে পারে গুয়াম, জাপান বা হাওয়াইয়ের মার্কিন ঘাঁটি।
এছাড়া, আমেরিকার মতো চীনও মানুষচালিত বিমানের সঙ্গে ড্রোন বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সমৃদ্ধ সহযোগী বিমান যুক্ত করার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।
তবে এখনো এই যুদ্ধবিমানগুলো নির্মাণ ও প্রযুক্তিগতভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। তিন ইঞ্জিনের ব্যবহার দেখে অনেকে মনে করছেন, শক্তিশালী একক ইঞ্জিন এখনো পুরোপুরি সফল না হওয়ায় এই বিকল্প বেছে নিচ্ছে চীন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশও নিজেদের ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার প্রজেক্টে কাজ করছে – যেমন যুক্তরাজ্য, জাপান ও ইতালির গ্লোবাল কমব্যাট এয়ার প্রোগ্রাম বা ফ্রান্স-জার্মানি-স্পেনের ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের এই প্রকাশ্য প্রদর্শন শুধু প্রযুক্তির উন্নয়ন নয়, বরং বিশ্বের সামরিক শক্তির মানচিত্রে নিজেদের আধুনিক ও শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরার কৌশল।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল