মহাকাশে ঘটল এক নতুন বিস্ময়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন কিছু বিস্ফোরণ শনাক্ত করেছেন, যা বিগ ব্যাং-এর (মহা বিস্ফোরণ, যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি) পর সবচেয়ে শক্তিশালী বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিস্ফোরণগুলোকে বিজ্ঞানীরা বলছেন Extreme Nuclear Transients বা ENTs, অর্থাৎ অতিমাত্রার পারমাণবিক জ্বলে ওঠা।
খবর অনুসারে, যখন আমাদের সূর্যের চেয়ে অন্তত তিন গুণ বড় কোনো তারা বিশাল ব্ল্যাক হোলের (কালো গহ্বর) কাছে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, তখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে।
কীভাবে জানা গেল?
উরোপীয় মহাকাশ সংস্থার গায়া (Gaia) মহাকাশযান এবং জুইকি ট্রান্সিয়েন্ট ফ্যাসিলিটি (ZTF)-এর মাধ্যমে এই বিস্ফোরণের তথ্য পাওয়া গেছে। গায়ার ডেটায়, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুটি জ্বলে ওঠা দেখা যায়। আর ২০২০ সালে তৃতীয় একটি বিস্ফোরণ দেখে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন, এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়।
এই বিস্ফোরণগুলো সাধারণ সুপারনোভা (তারার বিস্ফোরণ)-এর চেয়েও বহু গুণ বেশি শক্তিশালী। উদাহরণস্বরূপ, Gaia18cdj নামের একটি বিস্ফোরণ সাধারণ সুপারনোভার চেয়ে ২৫ গুণ বেশি শক্তি ছাড়ে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এদের উজ্জ্বলতা সাধারণ টাইডাল ডিজরাপশন ইভেন্ট-এর (যেখানে কোনো তারা ব্ল্যাক হোলে ধ্বংস হয়) চেয়েও ১০ গুণ বেশি।
কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
এনটিগুলো একদিকে যেমন দীর্ঘস্থায়ী—বছরের পর বছর জ্বলে—তেমনি এত উজ্জ্বল যে, মহাবিশ্বের বহু দূরের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের আচরণ জানার সুযোগ করে দেয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বিস্ফোরণগুলো আমাদের মহাবিশ্বের প্রাচীন ইতিহাস, ব্ল্যাক হোলের বেড়ে ওঠা এবং শক্তি ছড়ানোর ধরন বুঝতে সাহায্য করবে।
হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গবেষক জেসন হিঙ্কল বলেন, এই বিস্ফোরণগুলো আমাদের মহাবিশ্বে ব্ল্যাক হোল কীভাবে বেড়ে উঠেছে, তা জানার জন্য এক আলোকবর্তিকা। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, আগত দিনে আরও উন্নত যন্ত্রপাতি ও গবেষণা মিশনের মাধ্যমে এমন বহু ENT আবিষ্কার সম্ভব হবে, যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যাবে।
এই বিস্ফোরণগুলো যেমন ভয়াবহ তেমনি রহস্যময়। এখনো বিজ্ঞানীরা এসবের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি। তবে তারা আশা করছেন, আগামী কয়েক বছরেই এর রহস্য উন্মোচিত হবে এবং আমরা মহাবিশ্বকে নতুনভাবে জানতে পারব।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল