পরিচ্ছন্ন ও সীমাহীন শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে পরমাণু সংযোজন প্রযুক্তিতে বড় সাফল্য পেলেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা। ‘উইনডেলস্টেইন ৭-এক্স’ নামের একটি বিশেষ যন্ত্রের (যেটাকে বলা হয় স্টেলারেটর, অর্থাৎ চুম্বক দিয়ে পরিচালিত একটি ফিউশন যন্ত্র) মাধ্যমে তারা ৪৩ সেকেন্ড ধরে সংযোজন বিক্রিয়া চালিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। এটি আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে ‘লাইভসায়েন্স’।
পরমাণু সংযোজন হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়ায় দুটি হালকা পরমাণু একত্র হয়ে একটি ভারী পরমাণু তৈরি করে এবং বিশাল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। সূর্য ঠিক এই প্রক্রিয়াতেই জ্বলে। এই প্রযুক্তি নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা চলছে। তবে এতদিন পর্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা ও দীর্ঘ সময় ধরে বিক্রিয়া চালানো কঠিন ছিল।
উইনডেলস্টেইন ৭-এক্স যন্ত্রে বিজ্ঞানীরা হাইড্রোজেন গ্যাসকে চুম্বকের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করে ‘প্লাজমা’ নামের উত্তপ্ত গ্যাসে রূপান্তর করেন। ২২ মে তারিখে এই প্লাজমার তাপমাত্রা ২০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায় এবং সর্বোচ্চ ৩০ মিলিয়ন ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছায়। এই পরীক্ষায় 'ট্রিপল প্রোডাক্ট' নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচকেও নতুন রেকর্ড গড়া হয়।
ট্রিপল প্রোডাক্ট বলতে বোঝায়—প্লাজমার ঘনত্ব, তাপমাত্রা এবং কতক্ষণ ধরে সেই শক্তি ধরে রাখা যায়—এই তিনের গুণফল। এটি মূলত বোঝায়, সংযোজন বিক্রিয়া চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হওয়া কতটা সম্ভব।
পরীক্ষার সফলতায় উচ্ছ্বসিত উইনডেলস্টেইন ৭-এক্স-এর পরিচালনা প্রধান টমাস ক্লিংগার বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে প্লাজমা চালিয়ে ট্রিপল প্রোডাক্টে টোকামাক যন্ত্রের (আরেক ধরনের ফিউশন যন্ত্র) মতো মানে পৌঁছানো একটি বড় মাইলফলক। এটা ভবিষ্যতের বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির দিকে আমাদের এক ধাপ এগিয়ে দিল।
বিশ্বে এর আগে সর্বোচ্চ ট্রিপল প্রোডাক্ট অর্জন করেছিল জাপানের JT60U এবং ব্রিটেনের JET ফিউশন যন্ত্র, যেগুলো এখন আর চালু নেই।
বিজ্ঞানীরা পরমাণু সংযোজনকে মনে করেন শক্তির পবিত্র গহনা—যেটি একবার সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে পৃথিবীর জন্য প্রায় অফুরন্ত পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস হতে পারে। এটি পারমাণবিক বিভাজনের (fission) বিপরীত প্রক্রিয়া, যেখানে বড় পরমাণু ভেঙে শক্তি পাওয়া হয়। সংযোজনে তেমন কোনো ক্ষতিকর বর্জ্য হয় না এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিও অনেক কম।
গত বছর চীনের ‘কৃত্রিম সূর্য’ খ্যাত EAST ফিউশন যন্ত্র ১০০০ সেকেন্ড ধরে প্লাজমা ধরে রাখার মাধ্যমে আরেকটি বড় রেকর্ড গড়েছিল।
এই সাফল্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, পরিচ্ছন্ন ও নির্ভরযোগ্য শক্তির যুগ খুব বেশি দূরে নয়। পৃথিবীর জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় এবং ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে এই প্রযুক্তি এক নতুন আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল