তিন দফা দাবি আদায়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজপথে রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার সারাদিন আন্দোলনের পর রাতেও তারা কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান করেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল থেকে আন্দোলনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের পাশে কাকরাইল এলাকায় আরও শিক্ষার্থীদের যোগ দিতে দেখা গেছে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে অনেক শিক্ষার্থীকে আসতেও দেখা যায়।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা মৎস্যভবন থেকে কাকরাইলমুখী সড়কে ব্যারিকেড তৈরি করে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। কাকরাইল মোড়ে বসে ও দাঁড়িয়ে বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন তারা। অনেকে সড়কের মাঝখানে বসেও প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন।
এর আগে, রাতভর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সড়কে অবস্থান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন এবং ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক মঞ্জুর মোর্শেদ ভূঁইয়া।
এছাড়া, রাত আড়াইটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক কেএমএম রিফাত হাসান ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুমন কুমার মজুমদার। রাত দুইটা পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর, সহকারী প্রক্টরসহ অনেক শিক্ষক।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন শাখা ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, “এখান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। আমাদের কোনও আবাসন নেই, আবাসন ভাতা দিচ্ছে না- রাস্তার উপরই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। এত বঞ্চনার পর খালি হাতে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। গতকাল (বুধবার) পুলিশের লাঠিপেটা, জলকামান, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড খেয়ে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, না খেয়ে পুরোদিন পার করেছি। এখন লিখিত আশ্বাস ছাড়া ক্যাম্পাসে ফিরব না।”
জবি শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে সব ক্রিয়াশীল সংগঠন আছে। কাকরাইল মসজিদের ভেতরে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী ও বাইরে রাস্তায় অসংখ্য শিক্ষার্থী অবস্থান করছে। তারা বিপ্লবের গান গেয়ে সময় পার করছে। রাস্তায় যখন নেমেছি, রাস্তাতেই সব দাবি আদায় করব।”
শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “আমরা অধিকার আদায় না করে ঘরে ফিরব না। মার খেয়েছি, দরকার হলে আরও মার খাব। কিন্তু এবার কোনও আশ্বাসে রাজপথ ছাড়ছি না।”
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমি পিতা হয়ে সন্তানদের ফেলে যেতে পারি না। আমার শিক্ষার্থীরা যতক্ষণ আছে, আমিও ততক্ষণ থাকব। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে ফিরব না।”
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো-
১. আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে।
২. জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে।
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার (১৪ মে) দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে কাকরাইল মসজিদের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ/মুসা