সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে রোজা মনি নামে ৫ বছর বয়সী একটি শিশু নিখোঁজ হওয়ার পর তার মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার দাবি করেছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ড্যাবের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, গত সোমবার (১২ মে) সকালে রাজধানীর ভাড়া বাসা থেকে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু রোজা মনি। তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি এবং এলাকায় মাইকিংও করেন। কিন্তু তার সন্ধান মেলেনি। তবে পরেরদিন মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বিজয় সরণি ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার স্তূপে বস্তা পড়ে থাকতে দেখেন এলাকাবাসী। এরপর বস্তার ভেতরে মেলে রোজা মনির নিথর দেহ। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে। সেদিন বিকাল ৫টার দিকে মর্গ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় লাশ নিয়ে তেজকুনি পাড়ায় ফেরেন শিশুটির দুলাভাই মোবারক হোসেন ও স্বজনরা। এটি অত্যন্ত দু:খজনক এবং অমানবিক ঘটনা। এ ধরনের ঘটনায় আমরা ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
তিনি বলেন, দেশ আজ যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। দেশে মানবতার কোনো জায়গা নেই। আমরা মানবিক রাষ্ট্র চাই। মৃত্যু হলেও সরকারের দায় আছে। সরকার যাতে মৃত ব্যক্তির সৎকারের ব্যবস্থা করে। এরকম অমানবিক ঘটনা আমরা আর দেখতে চাই না, শুনতে ও জানতে চাইনা। শুধু এটুকুই বলতে চাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে যে ৩১ দফা রুপরেখা ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে স্বাস্থ্যখাতের বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। আমরা যদি সেই আলোকে একটি স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করতে পারি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে পারি তাহলে এ ধরনের অরাজকতা ও অমানবিকতা অবশ্যই থাকবে না। আমরা একটি মানবিক স্বাস্থ্য নীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাই। যেখানে আমরা চিকিৎসার অধিকার ও নিশ্চয়তা পাবো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে রুপরেখা দিয়েছেন আমরা সেটির বাস্তবায়ন চাই।
ঢাকা দক্ষিণ ড্যাবের সভাপতি ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, পাঁচ বছরের শিশু রোজা মনি দিনে দুপুরে নিখোঁজ হয়ে গেলো আবার তার মৃতদেহ তেজগাঁওয়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার হলো এটি যেন যেমন খুশি তেমন সাজোর দেশ। কারও কোনো জবাবদিহিতা নেই। শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের পর মর্গ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কাপড় মুড়ি দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছেন স্বজনরা। তারা জানিয়েছেন যে, হতদরিদ্র পরিবার হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার সামর্থ্য তাদের ছিল না। তাই এক আত্মীয়ের অটোরিকশায় লাশ তেজকুনি পাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত শিশু রোজা মনির দুলাভাই মোবারক বলেছেন, তার শ্বশুর বিদেশে থাকেন। তার পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে রোজা মনি ষষ্ঠ। তাদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। কয়েক মাস আগে ঢাকায় আসে পরিবারটি।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের মতো জনবহুল এলাকায় সরকারি হাসপাতাল থেকে একটা শিশুর মরদেহ বাসায় পৌঁছে দিতে পারবে না সেটি হতে পারে না। তাহলে দেশের এই যে এতো উন্নয়ন আর সংস্কার কমিশন করে জনগণের লাভ কী? সাধারণ নাগরিকদের কাছে সংস্কার হলো তার জীবনের মান উন্নয়ন। তা না করতে পারলে কোনো সংস্কার কাজে আসবে না।
নিহত শিশুর স্বজনের উদ্ধৃতি দিয়ে মুজিবুর রহমান আরও বলেন, গ্রামের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত পরিবারটির কনিষ্ঠ সদস্য রোজা মনি ঘরের ভেতর প্রচণ্ড গরমে কাহিল হয়ে বাইরে খেলতে বের হত। এ অবস্থায় সোমবার দুপুর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন ঘরের পেছনে একটি আবর্জনার স্তুপে ছোট্ট নালায় পাওয়া যায় তার বস্তাবন্দি লাশ। শিশুটির ১৬ বছর বয়সী মেজ বোন শিরিন বেগম জানান, ঢাকায় আসার পর তার মা একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন। তাদের ঘরের পেছনে একটি একতলা ভবন ভাঙার কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। তার পাশে লোকজন ময়লা ফেলে; সেখানে একটি নালায় ছোট্ট বস্তা পড়ে ছিল। লোকজনের কথা শুনে তারা সেই বস্তা খুলে রোজা মনির লাশ পান। তার গলায় নাইলনের দড়ি পেঁচানো ছিল। তাছাড়া তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, মঙ্গলবার স্থানীয়রা শিশুটির বস্তাবন্দি লাশ পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। শিশুটিকে হত্যার পর লাশ গুমের জন্য কেউ এটা করে থাকতে পারে। তেজগাঁও থানার এসআই আবদুল কাদের বলেছেন, শিশুটির শরীরে ফোসকার মত ক্ষত রয়েছে। ধারণা করা যায় তার শরীরে গরম পানি বা এ ধরনের কিছু ঢেলে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ড্যাব তথা চিকিৎসক সমাজ মনে করি, শুধু গরিব বলেই কী নিহত শিশু রোজা মনির লাশ সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের পরিবর্তে সিএনজিতে পশুর মতো কর বাসায় নিতে হয়েছে? তাকে নিয়ে মিডিয়ায় খুব বেশি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি? রোজা মনির মৃত্যু নিয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ জানাচ্ছে না কেনো? অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলেই শিশুটির মরদেহ পরিবারের কাছে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে করে বাসায় পাঠাতে পারতো। এ ধরনের আকস্মিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত সঠিক তদন্ত এবং খুনিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ ড্যাবের ডা. নিয়াজ শহীদ রানা, ডা. আমিরুল ইসলাম পাভেল, ডা. মো. সাইদুর রহমান, ডা. ফারহান তানভীর, ডা. কায়সার ইয়ামিন ইশাত, ডা. গালিব হাসান, ডা. এএসএম রাকিবুল ইসলাম আকাশ প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ