বৃষ্টিবিলাসী মনে তৈরি হয় সুরের অনুরণন বা কবিতার পঙ্ক্তিমালা। জানালার পাশে বসে বৃষ্টি উপভোগ রাজধানীর যান্ত্রিক নগরীর বাসিন্দাদের কাছে রূপকথার গল্পের মতো। তবে বৃষ্টির ভোগান্তি আবার থমকে দেয় নাগরিক জীবন থেকে গ্রামীণ জীবন। তবু বৃষ্টি সুন্দর, ভালোলাগা ও ভালোবাসার। প্রকৃতিকে সিক্ত করে অঝোর ধারার বৃষ্টি রাজধানীর বাসিন্দাদের যাপিত জীবনকে মাঝে মাঝে বিষাক্ত করে তোলে। বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বর্ষা মৌসুমে রিকশা, গাড়ি আর নৌকা একই রাস্তায় চলে। আপাতদৃষ্টিতে রাজধানীর জলাবদ্ধতায় সৃষ্ট রাস্তাকে বিল বা নদী মনে হলেও সেটি বৃষ্টিতে সৃষ্ট ভোগান্তির দৃশ্যকল্প। গত ২০ বছরে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে ঘুরে রাজধানীর বৃষ্টির দৃশ্যগুলো ক্যামেরাবন্দি করেছেন আলোকচিত্রী আবির আবদুল্লাহ।
২০০৫ থেকে ২০২৫ সাল-এ দুই দশকের তোলা ছবি নিয়ে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে চলছে ‘ট্রাবলিং রেইন’ শীর্ষক ১০ দিনের প্রদর্শনী। গতকাল ছিল এই প্রদর্শনীর অষ্টম দিন। এদিন বিকালে গ্যালারিতে ছিল শিল্পানুরাগীদের উপচেপড়া ভিড়। বৃষ্টিবিলাস আর বৃষ্টি ভোগান্তিতে সাজানো ছবিগুলোর সামনে এসে নিজেদেরকে সেলফিবন্দি করেছেন গ্যালারিতে আগতরা।
বৃষ্টিবন্দি মানুষের ভোগান্তি, বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া নিউমার্কেটের শাড়ির দোকানে বেচাকেনার দৃশ্য, জলাবদ্ধ রাস্তায় থেমে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে রোগী, জল সাঁতরে রাস্তা পার হতে গাড়ির সামনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় কুকুর, পরিবহনের অপেক্ষায় ছাতার নিচে জড়সড় দলবদ্ধ পথিক, কোমরপানিতে আবালবৃদ্ধবনিতার ছুটে চলা, কোথাও ব্যান্ডপার্টির সাজসজ্জা ভিজছে বৃষ্টিতে, কেউবা দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে ডুবে যাওয়া রাস্তায় যেন সমুদ্রসৈকতের আবহে। বৃষ্টির আনন্দ ও বেদনার এমন দ্বৈত রূপের দৃশ্য নিয়েই সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনী।
গ্যালারি প্রাঙ্গণে কথা হয় রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আগত তরুণী সুরভী আক্তার মাহির সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টি আমি খুবই উপভোগ করি। তবে বৃষ্টির ভোগান্তিটাও খুব খারাপ লাগে। তারপরও বৃষ্টি সুন্দর। যার কারণেই এই প্রদর্শনীতে আসা। এমন ব্যতিক্রমী একটি প্রদর্শনীতে এসে খুবই ভালো লাগছে। আজ শনিবার শেষ হবে ১৪ আগস্ট শুরু হওয়া ১০ দিনের এই প্রদর্শনী।